নিউ ডেস্ক
ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, তার ভাতিজা ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, ভোলা-৩ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবসহ ৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪০০ জনকে আসামী করে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) মোঃ আরিফ হোসাইন বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবৈধ আটকাদেশ, কারামুক্তি ও সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ০৫/০৩/২০১৯ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার বেলা ১১ ঘটিকায় প্রত্যেক জেলা শহরে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় ০৫/০৩/২০১৯ইং তারিখে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি ও ভোলা-১ আসনের বিএনপি’র মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পুত্র ভোলা-১ আসন থেকে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী আসিফ আলতাফ। উক্ত সমাবেশের বিষয়ে জানতে পেরে ১নং আসামির বাসভবনে পূর্ব দিন এক গোপন বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে যেহেতু জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পুত্র আসিফ আলতাফের জনসমর্থন আকাশচুম্বী সুতরাং তাদেরকে কোন সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ১নং আসামির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী যাহাতে ভোলায় না থাকে সেক্ষেত্রে তাদেরকে হত্যা করে হলেও সমাবেশ পন্ড করতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ওই দিন ভোলা শহরের মহাজনপট্টি বিএনপি’র কার্যালয়ে সমাবেশ শুরু হলে ২, ৩, ৪ নং আসামীর নেতৃত্বে ৫-৭৩ নং আসামীগণ ও অজ্ঞাত আসামী যাদেরকে বাদি দেখলে চিনতে পারবেন। তারা দা, ছেনী, লোহার রড, লোহার পাইপ, শটগান, বোমা, বগিদা, গুপ্তিসহ প্রধান অতিথি আলমগীর ও বিশেষ অতিথি আসিফ আলতাফকে হত্যার উদ্দেশ্যে এবং সমাবেশ পন্ড করার উদ্দেশ্যে সাড়াসি আক্রমণ চালায়। এ সময় ২, ৩, ৪ নং আসামী সমাবেশস্থল লক্ষ্য করে তাদের হাতে থাকা শর্টগান দিয়ে এলোপাথারী গুলি করিতে থাকে। ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ও ১৫ নং আসামীগণ শর্টগান হাতে নিয়ে সমাবেশ স্থলের ভিতরে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং গোলাম নবী আলমগীর এবং আছিফ আলতাফ কে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সাধারণ মানুষের ভিড়ে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইলে ২ ও ৩ নং স্বাক্ষী মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয় এবং মানব বেষ্টনীর মাধ্যমে গোলাম নবী আলমগীর ও আসিফ আলতাফকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তাছাড়া ১১, ১২, ১৩, ১৬ ও ১৮ নং আসামীগণ বৃষ্টির মত বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। ওই বোমার আঘাতে ৪ ও ৬ নং স্বাক্ষী মারাত্মক রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫ নং আসামীগণ সমাবেশের জনসাধারণকে এলোপাথারী কুপিয়ে ৫, ৭, ৯ নং সাক্ষীকে খুন করার উদ্দেশ্যে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। ২২ থেকে ৩০নং আসামীদের হাতে থাকা শর্ট গানের গুলি নিক্ষেপ ও তোমার বিস্ফোরণে ৭ থেকে ৯ নং সাক্ষী গুরুত্বর রক্তাক্ত যখন হয়। সভায় উপস্থিত জন সাধারণ মোশারফ হোসেন শাহজাহানের বাসার সামনের চত্বরের দিকে ছুটিয়া গেলে ৫৩ থেকে ৬৪ নং আসামীগণ ১১, ১২, ১৩ নং সাক্ষীকে ধারালো বগিদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে মাথায় ও সমস্ত শরীরে যখম করে। ৪১ থেকে ৭০ নং আসামীগণের হাতে থাকা শট গানের গুলি দিয়ে ১৪, ১৫, ১৭ নং সাক্ষীকে খুনের উদ্দেশ্যে আঘাত করে। আসামিরা বিএনপি অফিসের একটি আলমারী, একটি ৫০ ইঞ্চি টিভি, আসবাবপত্রাদি ভেঙ্গে চুরমার করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে ঘটনা স্থলত্যাগ করে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে গেলে আসামীরা সেখানেও বাঁধা দেয়। পরে আহতদের মোশাররফ হোসেন শাজাহানের বাসভবনে চিকিৎসা করান। ঘটনার বিষয়ে ওই সময়ে ভোলা সদর থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। বাদী ও আহতরা আসামিদের ভয়ে কোথাও মামলা করতে পারেনি। যার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সাবেক সাংসদ তোফায়েল আহমেদ, আলী আজম মুকুল, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবসহ ৮৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান