ভোলায় সরকারি খাল কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিক

 

 

বোরাহানউদ্দিন প্রতিনিধিঃ

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বেতুয়া খালে বাঁধ দিয়ে ভেকু মেশিনে মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এসএন ব্রিক ফিল্ডের মালিক প্রভাবশালী জসিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। দুটি ভেকু মেশিনের সাহায্যে অনবরত মাটি কাটায় হুমকির মুখে পড়েছে খাল পাড়ে থাকা স্থানীদের দোকান ও বসত ঘর। পাশাপাশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে একমাত্র মাটির সড়কটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন করে আরও মাটি কাটার জন্য খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের দোকান ও বসতঘর অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন ওই প্রভাবশালী ইটভাটা মালিক।

দোকান ও বসতঘর দ্রুত সরিয়ে না দিলে ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছেন বেকু ম্যানেজার মো. কামাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন বাজার এলাকা থেকে শুরু হওয়া হাসাননগনর ও টবগী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ওই খালের দুই স্থানে আড়াআড়িভাবে সু-উচ্চ বাঁধ দিয়ে ৩০০-৩৫০ মিটার খালের মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিরামহীনভাবে দুইটি ভেকু মেশিনে খালের ঢাল না রেখে ২৫-৩০ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটতে দেখা যায়। এতে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরসহ সড়ক ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

হাসাননগর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের খাল পাড়ের বাসিন্দা মিজান জানান, মঙ্গলবারের মধ্যে তার দোকান সরিয়ে না নিলে তা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ভেকু ম্যানেজার কামাল। এছাড়া খালের পাড়ের বাসিন্দা রফিজল ইসলাম, শাহে আলম, মো. ইব্রাহিম মো. ফারুক জানান, খালে ওই বাঁধ দেয়ার ফলে প্রায় ৩শ’ পরিবার বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে পড়বেন। এছাড়া ফসলও করতে পারবেন না।

অন্যদিকে, খাল পাড়ের হাকিমুদ্দিন-খাশমহল বাজার সংযোগ সড়কটি ঢাল না রাখায় ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। খাল পাড়ের টবগী ইউনিয়নের চারনম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পিয়ারা বেগম, কুলসুম বেগম, মোজাম্মেল হক ও জামাল জানান, খাল কাটায় তাদের ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। কিছু বললেই ভেকুওয়ালারা ঘর ভেঙ্গে ফেলার হুমকি-ধামকি দেয়। তারা ঝড়-বৃষ্টিতে মাটি ধসে ঘর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া মেঘনা পাড়ের জেলেরা জানান, আগে ঝড়-বৃষ্টিতে ওই খালে তারা আশ্রয় নিতেন। বাঁধ দেয়ার ফলে আশ্রয় নেয়ার আর জায়গা রইল না।

ভেকুর ম্যানেজার কামাল হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে কিসের ভিত্তিতে খালের মাটি কাটা হচ্ছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি জানি না, মালিক জানেন।

ব্রিক ফিল্ডের স্বতাধিকারী জসিমউদ্দিন হাওলাদার জানান, তিনি ওই খালের ডিসিআর সূত্রে মালিক হানিফ মাষ্টারসহ কয়েকজনের সঙ্গে চুত্তিভিত্তিক রাস্তা সংস্কারের জন্য মাটি কাটছেন। খালে দুই পাড়ের বাঁধও তাদের নির্দেশে করা হয়েছে। কাজের পর অবশিষ্ট মাটি তিনি নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে হাসাননগর ইউপি চেয়ারম্যান মানিক হাওলাদার বলেন, খাল কেটে মাটি উত্তোলনে নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা শোনেনি। যে সড়ক মেরামতের কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারেও ইউনিয়ন পরিষদকে কিছু জানানো হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) আশিকুর রহমান বলেন, প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা বেআইনি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, জলাধার আইনে খালে বাঁধ দেয়া যায় না। কি কারণে খাল কাটা হচ্ছে তা স্থানীয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবেন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ওই খাল দখলমুক্ত রাখতে মাছ চাষের জন্য জসিমউদ্দিন (ব্রিক ফিল্ডের মালিক) ও ফিরোজ মেম্বারকে এক বছরের জন্য খাস কালেকশনের জন্য দেয়া হয়েছে। হানিফ মাষ্টারকে দেয়া হয়নি। ওই বিষয়ে কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে

SHARE