টিপু সুলতানঃ
খেজুরের রস গ্রাম-বাংলার একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য উপাদানের নাম। আর এই রস সমৃদ্ধ ভোলায় আজ খেজুর রসের জন্য হাহাকার। ১০ বছর আগেও যেখানে শীতের প্রতিটি সকালে খেজুর রসের নাস্তাই ছিলো সকালের খাবার আজ তা প্রায় যুগের গল্পের খোরাকে দাড়িয়েছে।
বাঙালির প্রাণের অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা খেজুর রস সংগ্রহ এবং এর ব্যবহার চোখে পড়ে শীত মৌসুমে। এ সময় আমন ধানের আগমন ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত গ্রামের মানুষগুলোকে। কিন্তু, এখন কৃষকদের ধান কাটতে দেখা গেলেও খেজুর রস সংগ্রহে দেখা মিলছে খুব কম সংখ্যক গাছীকে।
এক সময় লক্ষ্য করা যেত বিকালে খেজুর গাছের উপরিভাগে পরিষ্কার করে দা দিয়ে কেটে মাটির তৈরি ছোট কলসি দিয়ে সুবিধামত জায়গায় স্থাপন করে রস সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হতো। তারপর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলায় খেজুর রস সংগ্রহের ধুম পড়ে যেতে। সংগ্রহের পর আগুনে তাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়।
বাপ্তা টবগী স্কুলের স্থানীয় গাছী মোঃ কালাম মিয়ার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, “যুগের পরিবর্তনে মানুষ একদিকে যেমন আধুনিক হচ্ছে। অন্যদিকে, অতীত ঐতিহ্যকে ভূলে যাচ্ছে সুযোগ-সুবিধার আশায়। মানুষ মনে করে খেজুর গাছ রোপণ করলে আয় কম, বছরে একবার খেজুর রস আসে। কিন্তু, তার স্থানে যদি অন্য কোন গাছ লাগানো হয় তাহলে সে গাছের কাঠ ও ফল দু’টিই লাভ করা যায়”।
তিনি আরো বলেন, “অতীতের তুলনায় প্রায় ৯০ ভাগ খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার কারণে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন গাছীরা। তবে, বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি কেজি তরল খেজুর রসের দাম ৬০ আর খেজুর মিঠাইয়ের মূল্য ৮০ টাকা” ।
সাধারণত, খেজুরের রস দিয়ে খেজুর মিঠাই, সেমাই, ফিরনি, বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। আর এগুলো তৈরিতে বিকল্প হিসেবে বর্তমানে চিনি ব্যবহার করা যায় বলে বিলুপ্ত হচ্ছে খেজুরের রস। এতে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাঙ্গানিজ (Mn), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), সালফার (S), আয়রন (Fe), পটাশিয়াম (Ka) এবং শর্করা, আমিষ ও ফলিক এসিড। যা মানবদেহের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
কালের পরিক্রমায় দিন দিন মানুষের চাহিদা অন্যরকম হওয়াতে কমেই চলছে খেজুর গাছের সংখ্যা। আর এর বিলুপ্তি ঠেকাতে খেজুর রসের উপকারীতা সম্পর্কে জানা বেশ জরুরি।