ভোলায় মাদকসেবীর হাত থেকে পালিয়েও রক্ষা পাচ্ছেনা স্কুল শিক্ষিকা!

ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের এক বীরমুক্তিযোদ্ধার মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা ভোলা শহরের মাদকসেবী যুবকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিচার চেয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভুগী এক অসহায় নারী।

শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগে বলেন, ভোলা পৌরসভা ওয়েস্টার্ণপাড়া ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মরহুম জালাল আহম্মেদ মিয়ার সন্তান মোঃ মাকসুদুর রহমানের সাথে গত ১৫-০৭-২০১০ইং তারিখে ইসলামী শরীহ মোতাবেক পারিবারিকভাবে আমার সাথে বিবাহ হয়। এই সংসারে আলফাজ মাহমুদ নামের (৬) বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। আমাদের দাম্পত্য জীবনের কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি জানতে পারি সে একজন মাদকসেবী এবং মাদক বিক্রেতা। তার ভোলা শহরে একটি জুতার দোকান ছিল ওই ব্যবসার টাকা দিয়ে মাদক সেবন করে ধ্বংশ করে দিয়েছে। বিয়ের পর স্বামী অত্যান্ত উচ্ছংখল হয়ে উঠে।

প্রতিদিন আমাকে ঘরের রুমের ভিতরে আটক রেখে শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করতো। গত ২০১৪ সালের দিকে অস্থায়ীভাবে এবং ১৭-০২-২০১৭ইং সালের দিকে আমার চাকরী স্থায়ী হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ৮২নং ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে অত্যান্ত শুনামের সাথে কর্মরত আছি। এরমধ্যে সাংসারিক জীবনে আমি কোন সুখ পাইনি, নেশা করে রাত ২টা-৩টার সময় বাসায় ফিরতো। আমি জিজ্ঞেস করলেই আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতেন এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতো। আমার মা- বাবা, ভাই-বোন তুলেও গালমন্দ এবং আমার বোনেরা দেহ ব্যবসা করে এ অশ্লিল কথা-বার্তা মানুষের কাছে প্রচার করে। আমার বাবা হাবিব তালুকদার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাংসারিক জীবনে স্বামী ব্যবসা করবে বলে আমার বাবা কাছ থেকে আমি তাকে কম হলেও ১০লাক্ষ টাকার মতো এনে দিয়েছে। নেশার পিছনে টাকা উড়িয়ে ফের যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই সময় আমাকে মারধর করতো।

যখন চাকরী করে বেতন উঠিয়ে বাসায় নিয়ে আসলেই সে নিয়ে যেতো। ভ্যানিটি ব্যাগটি পর্যন্ত ছিড়ে আগুন পুড়িয়ে ফেলে। সাংসারিক জীবনে সে গভীর রাতে ৫বার আমার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেয় নিরুপায় হয়ে থানায় জিডি করি। তার এতো অত্যাচার সহ্য করেও আমার মতো অসহায় মেয়ে সংসারে ছিলাম, একমাত্র সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে যে নির্যাতন সহ্য করেছি তা এদেশের কোন নারী সহ্য করবে না। তার অপকর্ম আর মাদক ব্যবসার কারনে পরিবার থেকেও সে বঞ্চিত হয়েছে, তবুও আমার স্বামী হিসেবে কখনো ফেলে দেয়নি। বাসা ভাড়া করে অনেক কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে জিবন-যাপন করেছি। মাস শেষে বেতন উঠিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যয় করেছি, কারণ সে বেকার ছিল কোন কাজ কর্ম করেনি বরং আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করতো, টাকা না দিলেই আমাকে হত্যা করবে ছুড়ি বের করতো এমন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। আমি ভয়ে সব সময় আতংকিত ছিলাম, তার ভয়ে ঠিক মতো তিন বেলা ভাতও খেতে পারিনি, কেদেঁ কেদেঁ বুক ভাসিয়েছি। সব সময় চিন্তা করেছি আমি যদি চলে যাই সন্তানের কি হবে, এসব চিন্তা করে তার অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে ছিলাম। এছাড়াও গত তিনবছর আগে পহেলা বৈশাখের দিন বাসায় একটি মেয়ে নিয়ে উঠে, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়েটি কে? প্রশ্নের উত্তরে সে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন এবং রাতের অন্ধকারে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিবে প্রস্তুতি নেয় আমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে রক্ষা করে, পরে থানায় জিডি করি।

তার ফ্যামিলি থেকে আমাকে অনেক বার বলেছে তুমি চলে যাও ও তোমাকে যেকোন সময় মেরে ফেলবে, তখন আমাদেরকে দায়ি দিতে পারবে না। নিরুপায় হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে পরপর ২টি জিডি করেছি যাহার জিডি নম্বর ৮০৪ এবং ২বার ডিফোর্সও দিয়েছি কিন্তু তার এলাকার লোকজন এসে ভুল বুজিয়ে আমাকে তার সাথে ঘর সংসারে চাপ দেয় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংসার করতে বলেন।, আবারো ইসলামি মোতাবেক ডিফোর্স লেটার বন্ধ করে ঘর সংসার করি। ফের নেশা করে আবারো শুরু হয় আমার ওপর নির্যাতন অত্যাচার। স্কুল থেকে আসলে বোরকা জোরপুর্বক খুলে আগুনে পুড়ে ফেলে এবং রাতে শরীরের পোষাক খুলে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতো। আমার ব্যক্তিগত ফোনে তোলা ছবিগুলো গোপনে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক ফেস আইডিতে ছেড়ে দিয়ে আমার মান-সম্মানের হানি ঘটায়। সারারাত অনেক কষ্ট করে রাত কাটিয়ে দিতাম। কোন সময় আমার পরিবারের কাছেও বিষয়গুলো বলিনি, জীবনে একটি কলংকের দাগ বসবে একারনেও তার বিরুদ্ধে মামলাও করিনি, আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। মান-সম্মানের দিকে তাকিয়ে অনেক নির্যাতন,অত্যাচার সহ্য করেছি। যখন আমি সন্তানকে বাসায় রেখে স্কুলে যেতাম, সন্তানকে একা পেয়ে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতো এবং ব্যাপক মারধর করতো। সর্বশেষ তার নির্যাতন আর অত্যাচার থেকে বাচাঁর জন্য গত ০৬-০৩-২০১৯ইং তারিখ নোটারী আদালতের মাধ্যমে ডিফোর্স এবং ইসলামি শরীয়হ মোতাবেক তালাকা দিয়েছি, সে এখন আমার কোন স্বামী নেই।’

গত বৃহস্পতিবার ২৮-০৩-২০১৯ইং তারিখ দুপুর বেলা আমার কর্মরত প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ দিঘলদী ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেখানে প্রাইভেট-কার নিয়ে বখাটে সন্ত্রাসীরাসহ আমাকে তুলে নিয়ে হত্যার উেেদ্দশ্যে আসে এবং আমার বিশাল ক্ষতি করবে এসিড নিক্ষেপ করবে, চাকরী খেয়ে দিবে এমন হুমকি-দামকি দেয়। নিরুপায় হয়ে পুলিশের ৯৯৯ নাইনে ফোন করে আইনের আওতায় যাই। এরপর একের পর এক সন্ত্রাসী এবং মাদকসেবীদের নিয়ে মটরসাইকেল যোগে, প্রাইভেট-কার যোগে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করবে যার অনেক স্বাক্ষী রয়েছে। এছাড়াও তিনি যে আমার বিরুদ্ধে পরকিয়ার অভিযোগ তুলে কল লিষ্ট বের করেছে, ভোলার সামাজিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা। উল্লেখ্য ২০-০১-২০১৯ইং তারিখ তার সামনে বসে ০১৭৮৩৫৩৩৭৭৬ ভোলার সাংবাদিক আল-আমিন এম তাওহীদের সাথে ০১৭১১৩১২২৬৯ এই নম্বরে আমাদের পারিবারিক জমি নিয়ে কথা হয়েছে। তার সাথে মোট এক সপ্তাহ কথা হয় পারিবারিক বিষয়ে আমিসহ আমার বাবা এবং ভাই। বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নিরব মিঝি নামে একব্যক্তি সে আমাদের ৪০ শতাংশ জমি জোরপুর্বক দখল করেছে।

সেই জমি বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নের পদ্মমনষা মৌজায় রয়েছে, জমির বিষয়ে এবং পারিবারিক বিষয়ে কথা হয়েছে। তখন তার সাথে আরো কয়েকজন সাংবাদিকও ছিল। তার সাথে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক কিংবা পরকিয়া হয়নি। যে সিমটি দিয়ে কথা হয়েছে ওই সিমটি মাকসুদের নামে রেজিস্ট্রেশন করা আমি পাশে দাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ব্যবহার করেছি। কললিষ্টে মোট ৬৫টি কল, তারমধ্যে ৪০টি কল ১ সেকেন্ড, ১মিনিটের এবং কোনটায় সেকেন্ডও রয়েছে। ১০দিনের কল লিষ্টে সর্বমোট-৯০মিনিট কথা হয়েছে এটা সম্পূর্ন আমার বাবা বলেছে পারিবারিক বিষয়ে। সে তার অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে প্রচার করেছে ৩বছর সর্ম্পক এবং ভিডিও অডিও প্রমাণ রয়েছে এগুলো সব মিথ্যা, যদি সত্য ভিডিও প্রমাণ দেখাতে পারে আমার ফাসিঁ হলে মেনে নিবো। আমার ওপর নির্যাতনের কথাও সাংবাদিক আল আমিন তাওহীদের কাছে সব বলেছি এবং আমার পরিবারও বলেছে, কারণ আমার জীবনের নিরাপত্তা ছিল না হয়তো সাংবাদিকদের জানিয়ে রাখলে ভবিষ্যতের জন্য ভাল হবে এমনটাই চিন্তা ধারা ছিল।

সে যেসকল স্থানে অভিযোগে দিয়েছে আমার সাথে ভোলার সাংবাদিক আল আমিন এম তাওহীদের সাথে পরকিয়ার ঘটনা এবং চাদাঁ দাবি করেছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা, এরকমের কোন ঘটনা ঘটেনি। সে আমার কোন স্বামী নয়, এই নির্যাতনকারীর হাত থেকে আমি যেন রেহাই পেতে পারি এবং শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করতে পারি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ। আমাকে তুলে নিতে আসে বৃহস্পতিবার ২৮-০৩-২০১৯ইং তারিখ ওইদিনই বিকেলে ভোলা সদর মডেল থানায় হাজির হইয়া আমি বাদী হয়ে মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আমার চাকরী ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি অভিযোগ মামলা দায়ের করেছি যাহার মামলা ২৭২। এর আগে ২বার তালাকসহ গত ০৬-০৩-২০১৯ইং তারিখ হইতে সে আমার কোন স্বামী নয়। সে আমার ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি, চাকরীসহ আমার জীবনের কোন নিরাপত্তা চেয়ে মাদসেবী ও ব্যবসায়ী মাকসুদুর রহমানের সকল নির্যাতন,অত্যাচার, হয়রানি থেকে যেন বেচেঁ থাকতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ ভোলার স্থানীয় সাংসস সদস্য মহোদয়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত মাকসুদুর রহমানের ব্যবহৃত ০১৭৮৩-৫৩৩৭৭৬ মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও ফোনটি রিসিভ করেনি।

এব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি ছগির মিঞা বলেন, আসামি পলাতক রয়েছে, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শিক্ষিকা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

(আরজে,২৪এপ্রিল-২০১৯ইং)

SHARE