চরফ্যাশন প্রতিনিধি, ভোলা ॥
চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জে মুরগীর চুরির অপবাদে এক কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করেছে ইউপি মেম্বার আমজাদ। এসআই শ্রী পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি ভিকটিমের পরিবার। উল্টো রুবেলের মা কে ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে সরিয়ে দেন পবিত্র কুমার।
গত ১৫ নভেম্বর ২০১৮ইং তারিখে বেলা সাড়ে ১১টায় এলাকার স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত কিশোর হাজারীগঞ্জ ৯নং ওয়ার্ড আঃ মালেক এর ছেলে রুবেল (১৪)। এ ঘটনায় রুবেলের মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে ইউপি মেম্বার আমজাদ সহ ৬ জনকে আসামী করে ১৮ জানুয়ারী ২০১৯ইং তারিখে শশীভূষণ থানায় মামলা দয়ের করেছে। যার মামলা নং ১৩/২০১৯ইং।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ইং তারিখ গভীর রাতে কিশোর রুবেলের পাশের পাশ্ববর্তী কবির তালুকদার এর ১টি মুরগীর চুরির অপবাদ দিয়ে ইউপি মেম্বার আমজাদ এর কাছে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের আলোকে ইউপি মেম্বার আমজাদ তার দলবল নিয়ে রুবেলকে সন্দেহভাযন ভেবে মেঘনার পাড় থেকে ধরে বাড়ির কাছে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাতপা ও লাঠি বেধে, মধ্য যুগীয় কায়দায় চতুরপার্শে দলবল সহ ঘিরে রেখে এলোপাথারী মারধর শুরু করে। তার ডাক চিৎকারে গ্রামের আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে মা বিলকিছ উদ্ধার করতে ছুটে গেলে মেম্বার আমজাদ তাকে ছাড়িয়ে নিতে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা তাৎক্ষনিক জোগারড় করা তার পক্ষে অসম্ভব বিধায় মাত্র ১০ হাজার টাকা মেম্বারকে দিয়েও ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে পারেনি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে বিকালে কিশোর রুবেলকে ছেড়ে দিলে মা বিলকিছ চরফ্যাশন হাস-পাতালে ভর্তি করার জন্য চেষ্টা করলে তাকে নিতে দেয়নি মেম্বার ও তার দলবল। কিছুদিন পর চরফ্যাশন হাসপাতালের ডাক্তার নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর কাছে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা নেয়। কেন আইনের আশ্রয় নেয়া হয়নি সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বিলকিছ জানান, আমজাদ মেম্বার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে অনেক হুমকী ধামকী দিয়ে এলাকায় আটকিয়ে রাখে। এর পরেও অনেক কষ্টে নির্যাতিত কিশোর রুবেলের মা শশীভূষণ থানায় গিয়ে ওসি’কে না পেয়ে উপ-পুলিশ পরিদর্শক(এসআই) শ্রী পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি বিচার পাওয়ার আশ্বাসে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এতে ওই ক্ষমতাধর মেম্বর নির্যাতিত পরিবারকে হুমকি ধামকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই মামলা দিতে বিলম্ব হয়। কিশোর নির্যাতনের ভিডিও চিত্র আমজাদ মেম্বার ও তার সহযোগীরা এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে ভাইরাল করলে মা বিলকিছ তার ছেলে নির্যাতনের চিত্র টি হাতে পায়। তা নিয়ে হাজির হয় শশীভূষণ থানার ওসি মনিরুল ইসলামের কাছে। ওসি মনিরুল বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা রুজু করে। মামলায় ইউপি সদস্য আমজাদ সহ ৬জনকে আসামী করা হয়েছে। ওসি মনিরুল জানান, কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার ভিডিও চিত্র আমার কাছে আছে। নির্যাতনে চিত্র আসহনীয় তাই আসামীদের ধরার চেষ্টাও অব্যাহত আছে।
এঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার জানান, ঘটনার দিন কিশোরের মা আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি থানায় পাঠিয়ে দেই। তবে থানা এখনো কোন আসামী গ্রেফতার করেনি।