টিপু সুলতানঃ
ভোলার সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশায় এক ভারসাম্যহীন নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে। এদিকে ভাসাম্যহীন ধর্ষাতাকে গর্ভ নিরোধক পিল কিনে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে ধর্ষক পরিবারের বিরুদ্ধে। ভোলার প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। ভিকটিম মেডিকেল পরিক্ষা শেষে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
ভিক্টিমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউপি: চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন মিয়া পাচ মাস পূর্বে ওই নারিকে নিজ বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানান, বিগত তিন বছর পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে একটি প্রহসনের শালিশির মাধ্যমে নির্যাতিতা এ নারীকে তার স্বামীর সাথে তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন চেয়ারম্যান গিয়াস । স্বামী পরিত্যক্তা তিন সন্তানের জননী এ নারী চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাজকর্ম করাকালীন তার উপর গিয়াসউদ্দিনের লোলুপ দৃষ্টি পরে। ভিক্টিম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বিগত তিন মাস যাবত চেয়ারম্যান গিয়াস তাকে ধর্ষন করে আসছে। লোক লজ্জা ও চেয়ারম্যানের ভয়ে ধর্ষিতা চেয়ারম্যানের এ কাহিনী কাউকে বলতে সাহস করেনি । এক পর্যায়ে গৃহকর্মী অন্তসত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি চেয়ারম্যান পরিবারে জানাজানি হলে ধর্ষক গিয়াস তার গৃহকর্মীকে সন্তান নষ্ট করতে জোড়পুর্বক ট্যাবলেট খাইয়ে দেন। এতে করে ধর্ষিতার রক্তক্ষরন হতে থাকে। মারাত্মক অসুস্থ্য হলে গত ১লা ডিসেম্বর ভোর রাতে গৃহকর্মীকে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে দেন ধর্ষক চেয়ারম্যান গিয়াস। নিরুপায় নারী উপায় না পেয়ে গ্রামে আপন বোনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ধর্ষিতা অভিযোগ করেন, ডাক্তার কিংবা পুলিশের কাছে যেন যেতে না পারে সে জন্য চেয়ারম্যান তার বোনের বাড়ির সামনে গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে পাহাড়ায় বসান। শারীরিক যন্ত্রনা সইতে না পেরে ধর্ষিতা নারী গতকাল (৫ ডিসেম্বর ) ভোর রাতে বোন ও ভগ্নিপতিকে সাথে নিয়ে কোন রকম পালিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছে এসে ঘটনার বিবরন দিতে গিয়েও আতঙ্কিত হযে পরেন সে । হাসপাতালের কড়িডোরে প্যান্ট-শার্ট পড়া লোকজন দেখেই চেয়ারম্যানের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডাদের ভেবে দৌড়ে পালাতে চেস্টা করেন। এর পর হাসপাতালের নার্স ও স্টাফগন অভয় দিয়ে বুঝিয়ে ধর্ষিতাকে মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে ভর্তি করান। সেখানে তার মেডিক্যাল টেষ্ট করেন ডাক্তাররা। ধর্ষনের বিষযটি নিয়ে যে নারী এতোদিন পুলিশের কাছে যেতে পারেনি, হাসপাতালে তার ভর্তির খবর শুনেই মুহুর্তের মধ্যে সেখানে ছুটে আসলো পুলিশের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০ মি: টায় পুলিশের ২টি পিকআপ ভ্যানে মহিলা পুলিশ,আর্মড পুলিশ, পুলিশ সদ্যস্য এবং অপর একটি নিল কালারের পাজেরো গাড়িতে করে পুলিশ কর্মকর্তাগন ছুটে যান হাসপাতালে ভর্তিরত ধর্ষিতার রুমে। প্রায় ৩০মিনিট ভিকটিমের কাছে ঘটনার চুলচেড়া ব্যাখ্যা জানতে চান পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যানুযায়ী, আতংকিত ও ভারসাম্যহীন নারি সঠিকভাবে ঘটনার বিবরন দিতে না পারায় থানা পুলিশ ভিক্টিমকে তাদের জিম্মায় নিয়ে যান। এসময় ভিক্টিমের প্রতি পুলিশের মানবিক আবেদন দেখে হাসপাতালের অন্যান্য রুগিরা পুলিশকে সাধুবাদ জানান। এ ব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে তদন্ত চালাচ্ছি। ভিক্টিম কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় আমাদের একটু সময় লাগছে। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যাবস্থা নেবো।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি সংবাদ কর্মীদের কাছে ধর্ষনের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করে বলেন, তার বাড়িতে এ ধরনের কোন নারীকেই গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন মিয়া কর্তৃক নিজ ঘরের গৃহকর্মীকে ধর্ষন, অন্তঃসত্তা ও নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়টি এখন ভোলার টক অব দ্য টাউনে পরিনত হয়েছে।