ভোলার দৌলতখানে গণধর্ষণ মামলার সকল আসামীরা পুলিশের নাকের ডগায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে,

জসিম রানা,ভোলানিউজ.কম,
বহুল আলোচিত ভোলার দৌলতখান উপজেলার উত্তর জনয়নগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ভোলা আইনজীবী সমিতির (করনিক) তাসলিমা বেগমকে গণধর্ষণ ও কুপিয়ে আহত করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এ ব্যাপারে গত ১৫ এপ্রিল ভোলা জেলা দ্বায়ারা জজ ও নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে, তাসলিমার মেয়ে মুন্নি আক্তার। মামলা নং-২৫৯/১৮। মহামান্য আদালত এ মামলাটি এফআইআর নেয়ার জন্য আদেশ দেন দৌলতখান থানার ওসিকে। মামলার ১০ দিনও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, মামলার ১নং আসামী উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ইয়াছিন লিটনসহ সকল আসামীরা পুলিশের নাকের ডগায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে দেখার কেউ নাই। অন্যদিকে আসামীরা বাদীপক্ষকে মামলাতুলে নেয়ার জন্য হুমকী-ধামকী অব্যাহত রেখেছে। আসামীদের ভয়ে বাড়ী যেতে পারছে না তাসলিমার পারিবারের সদস্যরা। মামলার বিবরণ ও ভিক্টিমের বক্তব্য সূত্রে জানাগেছে, গত ৩ এপ্রিল ২০১৮ তাসলিমা প্রতিদিনের মত আদালতের কাজ সেরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মধ্য জয়নগর কাজীর রাস্তা দিয়ে বাড়ীতে যাচ্ছিল। ওই মহুর্তে তাসলিমা কাজী বাড়ীর সামনে গেলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা একটি সন্ত্রাসী দল প্রথমে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুখ বেঁধে কাজী বাড়ীতে নিয়ে যায়। এসময় দূবর্ৃৃত্তরা তাকে কাজি বাড়ীর মহাসিনের ঘরের সামনে নিয়ে দ্বার কারায়। ওই মুহুর্তে তাসলিমা মহাসিনের ঘরের সিড়িতে ওই এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াছিন লিটনকে দেখতে পায়। তাসলিমা কিছু বুঝার আগেই ইয়াছিন লিটন এসে তাসলিমাকে কয়েকটি চর থাপ্পর দিয়ে বলে তুই জীবনে আমার অনেক ক্ষতি করেছস, আজ তোর কোন রক্ষা নাই। এসময় তাসলিমা লিটনের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে সে তাকে আরো মারধর করে, ওই ঘরের মালিক মহাসিনসহ একটি দূর্বৃত্ত চক্রের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তিতে, মহাসিন, নোমান, কালা লিটন, নুরুদ্দিন, ছালাউদ্দিন, শাহিন ও শেখ কামালসহ অজ্ঞত আরো ২/৩জন তাসলিমাকে মহাসিনের ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষনের চেষ্টা চালায়। এতে তাসলিমা আপত্তি ও দৌড়ে পালাতে চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকে বেদরক মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কপালে কোপ দিয়ে গুরুতর যখম করে। এক পর্যায়ে তাসলিমা সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আচেতন হয়ে পরলে উল্লেখিত সন্ত্রাসীদের কয়েকজন তাকে একের পর এক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সন্ত্রসীরা তাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুতি নিলে তাসলিমা তার সন্তানের জন্য দূর্বৃত্তদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায়। এর পর এ ঘটনার মূল হোতা ইয়াছিন লিটনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার কাছ থেকে কয়েকটি খোলা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে এবং মামলা না করার জন্য হুমকী ধামকী দিয়ে ভোর রাতে তাসলিমাকে তার বাড়ীর পাশের একটি মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে। পরে তাসলিমার ডাক চিৎকারে তার মেয়ে মুন্নি ও স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল দৌলতখান থানার পুলিশ ভোলা সদর হাসপাতালে এসে তাসলিমার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং ধর্ষণের আলামত নির্নয়ের জন্য তাকে ডাক্তারী পরীক্ষা করায়। ভোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৯দিন যাবৎ তাসলিমাকে ৫ ব্যাগ রক্ত ও সর্বোচ্চ সেবা দেয়া সত্ত্বেও তার অবস্থার উন্নতি না দেখে গত ১১ এপ্রিল বরিশাল শেবাচিমে স্থানান্তর করে। ব্যায়বহুল চিকিৎসা ও অর্থের অভাবে ঘটনার ২১ দিনেও তাসলিমা সুস্থ্য হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে তাসলিমা শেবাচিমের ওসিসি বিভাগে চিকিৎসাধিন রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, তাসলিমার উপর রাতভর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এতে তার মাজা ও মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। যে কারণে সে হাটতে পারছে না এবং মাথা দ্বার করাতে পারছে না। অন্যদিকে সংসারের একমাত্র উপার্যক তাসলিমাকে না পেয়ে তার ছোট ছোট সন্তানরা খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সূত্রে জানাগেছে, তাসলিমার উপর নির্যাতন কারীরা দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির সকল করনিক এক হয়ে মানববন্ধনসহ বড় ধরণের আন্দোলনের ডাক দিবে। এ ব্যাপারে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, দোষিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলছে। অতিশিগ্রই আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযুক্ত ১নং আসামী চেয়ারম্যান ইয়াছিন লিটন জানান, এ ঘটনায় সে জড়িত ছিলেন না। তাকে সড়যন্ত্রমূলক ভাবে মামলায় আসামী করা হয়েছে।

(আল-এম,২৪এপ্রিল-২০১৮ইং)

SHARE