আমজাদ হোসেন।। ভোলায় দৌলতখানে ও চরফ্যাশনে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মূল ভূ-খন্ডের এলাকা গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দুর্গম চর চরাঞ্চলেও বইছে নির্বাচনী আমেজ। চলছে মেম্বার ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচরনা। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও। দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ছোটখাট মামলা হামলার ঘটনা ঘটলেও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে চরাঞ্চলের ছোটখাট দোকানপাট মোড়সহ নির্বাচনী এলাকা। সরেজমিনে ভোলার চরফ্যাশনের কুকরি- মুকরি ও দৌলতখানের মদনপুরের দুর্গম চরে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১৫-২০ বছর পূর্বে মেঘনার বুক চিরে জেগে উঠা এই চরটিতে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। পুরো মদনপুর ইউনিয়নের ৬ হাজার ৫ জন ভোটার রয়েছে। এই ভোটারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভোটার মদনপুর চরে বসবাস করছে। মদনপুর ইউনিয়নের সেই চরটি বতর্মানে মেঘনায় জেগে উঠা বিছিন্ন চর হলেও একসময় ঐ অঞ্চলটি জেলার মূল ভূখন্ড ছিলো। তাই নিয়ম অনুযায়ী ঐ চরেই ইউপি পরিষদ নির্মিত হয়ে ইউনিয়নের কার্যক্রম চলছে। যদিও ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দারাই মূল ভূখন্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নে বসবাস করছে। মদনপুর চরটি তুলনামূলক ছোট, নদী ভাংতি এলাকা ও জনবসতি কম হওয়ায় সেখানে ৯টি ওয়ার্ডের মাত্র ৪ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ছোট বড় দুই একটি বাজার রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটাররা বাজারে এসে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থীরা নদীর ওপার থেকে চরের বাজারে গিয়ে মিছিল মিটিং লিফলেট বিতরনসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। সেই ইউপিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নৌকা প্রতিকে এ কে এম নাছির উদ্দিন নান্নু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকে জামাল উদ্দিন চকেট চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েকদিন পূর্বে সেখানে দু’গ্রুপে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বর্তমানে যে যার মতো প্রচার প্রচারনা করছেন। একদিকে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী নাছির উদ্দিন নান্নুকে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন নেতা -কর্মীদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে ভোটারদের সাথে মিছিল মিটিং, উঠোন বৈঠক ও প্রচার প্রচারনা করে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি এনায়েত উল্লাহ শাহ, অপরদিকে আনারস প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল উদ্দিন (চকেট) এর পক্ষে সমর্থকরা মিছিল মিটিং, উঠোন বৈঠক ও প্রচার প্রচারনা করে যাচ্ছেন।
ঐ চরের জনগনও সাধারন ভোটাররা জানান, একে এম নাছির উদ্দিন নান্নু চেয়ারম্যান থাকাকালীন সাধারন বসবাসকারী নির্ভয়ে ও নিপিড়ন ব্যাতিত বসবাস করে আসছেন, এলাকায়ও তুলনামূলক ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, পূূর্বে ঐ চরে তেমন কোন রাস্তাঘাট ছিলোনা, বাজার মসজিদ মাদ্রাসা ছিলোনা, অর্থাৎ পরিবার বসবাসের উপযোগী ছিলোনা। নাছির উদ্দিন নান্নু চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার একান্ত প্রচেষ্টায় চররের রুপ পাল্টে গেছে এমন দাবী একেএম নাছির উদ্দিন নান্নু সমর্থকদের। অন্যদিকে জামাল উদ্দিন চকেট নির্বাচিত হলে অবহেলিত মদনপুর চরকে একটি পরিবেশ বান্ধব শিল্পসম্মত আধুনিক জনপদে রুপান্তররের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ভোটাররা জানান, উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে তারা ভোট গ্রহন চান, কোন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা তারা কামনা করছেন না। ভোটের মাধ্যমে যিনি জয়ী হবেন তারা তাকেই গ্রহন করে নিবেন বলেও তারা জানান। উল্লেখ্য যে, ভোলা জেলার মধ্যে ২ উপজেলার ১৫টি ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চরফ্যাশন উপজেলার ৮ টি ও দৌলতখান উপজেলার ৭ ইউপি রয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার মধ্যে অধ্যক্ষ নজরুল নগর, ঢালচর, আবুবকরপুর, আবদুল্লাহপুর, ওসমানগঞ্জ, চর মানিকা, রসুলপুর, চর কুকরি মুকরি এবং দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, ভবানীপুর মেদুয়া, চর খলিফা, উত্তর জয়নগর, দক্ষিন জয়নগর ও চরপাতা ইউপি রয়েছে। এসব ইউপি পরিষদের মধ্যে কয়েকটি মামলার জটিলতায় নির্বাচন হচ্ছেনা। বাকি ইউপিগুলোতে ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।