ভোলা প্রতিনিধি॥ উপকুলীয় জেলা ভোলা সদর থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার দূরজনপদ চরফ্যশনের চর উসমাগঞ্জ ও দক্ষিণ চর মাদ্রাজ ইউনিয়ন। পলিমাটি উর্ব্বর সেই চরের জমিতে ধানের ব্যাপক ফলন হয়। বিশেষ করে আমন ধানের বিপুল ফলনে কৃষক কুশী হলেও এক নিমিষেই তা পন্ড হয়ে যায় লাঠিয়াল বাহিনীর দুর্বৃত্তপনায়। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে সেখানকার দক্ষিণ চরমাদ্রাজে গেলে কৃষকরা জানান,চরের চিহ্নিত লাঠিয়ালশেঠ মুনছুর বাহিনীর তান্ডবের কথা। তারা জানান,প্রতিবছর আমন ধানের মৌসুম আসলেই আওয়ামী ক্যাডার মুনছুর সর্দারের নেতৃত্বে তার স্বশস্ত্র বাহিনী চরের জনপদকে অশান্ত করে তুলে। তাদের অস্ত্রের ঝনঝণীতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে চরের জমির ধানের মালিকরা। ওই চরের কৃষক আবুল কালাম, মিজান গাজী,ফরিদ,মোশাররফ ও কালিমুল্লাহর সাথে কথা হয়। তারা জানান,আমন ধানের গোছা লাল হওয়ার সাথে সাথে মুনছুর বাহিনীর চোখ-ও লাল হতে থাকে। ধান কাটার সময় আসলে মুনছুরের গুন্ডা বাহিনী চরের জনপদে লুটের রাজত্ব চালায়। তারা জানান,মুনছুরের ছেলে যুবলীগ ক্যাডার জামাল ও শ্রমিকলীগ ক্যাডার কামালকে দিয়ে পৃথকভাবে দু’টি ক্যাডার বাহিনীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরা আলাদা আলাদা সেক্টরে ভাগ হয়ে চরের ধান লুটের মচ্ছব চালায়। শুধু তা-ই নয়,এদের দূর্বৃত্তপনায় চরের মানুষ তাদের গবাদিপশু মাঠে চড়াতে পারেনা। এসব ক্যাডাররা ধান লুটের পাশাপাশি কৃষকের গরু,ছাগল,ভেড়া লুটকরে ভূড়িভোজ চালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,গত ১৪ নভেম্বর,২০২৪ ইং তারিখে মুনছুরের নেতৃত্বে তার চেলাচামুন্ডারা কৃষকের কয়েকটি গরু লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই গরুর দু’টি জবাই করে তার দলীয় সন্ত্রাসীরা মুনছুরের বাড়ীতে মেজবান খেয়ে উল্লাশ করেছে। অনুসন্ধসনে জানা যায়,মুনছুরের গুনধর পুত্র ঢাকার ক্যাসিনো ক্যাডারখ্যাত যুবলীগ সভাপতি সম্রাটের গৃহপালিত ক্যাডার ছিলো। পুরান ঢাকার সদর ঘাট,ভিক্টোরিয়া পার্ক,সূত্রাপুর,গেন্ডারিয়া ও বাংলাবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করার দায়িত্ব পালন করতো এই জামাল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সন্ত্রাসী জামাল এলাকায় গিয়ে এখন লাঠিয়া বাবা’র গুন্ডামির দায়িত্ব পালন করছে। লাঠিয়াল মুনছুর একই ঘটনা ঘটাচ্ছে-উত্তর চরফ্যাশনের চর উসমানগঞ্জে। সেই চরের কৃষক মোস্তাক খন্দকার,ফরিদ,মালেক,আবি আব্দুল্লাহ ও লতিফ মাঝির সাথে কথা হয়। তাদের কাছ থেকে জানা যায়,ভূমিদস্যু মুনছুরের সন্ত্রাসলীলার ভয়ঙ্কর বহু লোমহর্ষক কাহিনী। তারা জানান, ওই চরে মুনছুরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছে-ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ। বিগত স্বৈর সরকারের জমানায় উসমানগঞ্জ’র চরে রিয়াজের টর্চার সেলে মুনছুরের নেতৃত্বে তার বাহিনীর লোকেরা জমিদখল ও চাঁদার দাবীতে সাধারন কৃষকদের ধরে এনে দিনরাত টর্চার চালাতো। জমির ধান লুট শেষে ওই আস্তানা থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মিলতো অপহৃত কৃষকদের। বিগত ১৭ বছর মুনছুর বাহিনীর নির্যাতনের শিকার কৃষকরা কখনো তাদের কষ্টের বোনা ধান ঘরে তুলতে পারেনি। চলতি বছরের ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর উক্ত মুনছুর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও চরের ধান পাকার সময় ঘনিয়ে আসার খবরে সে ফের এলাকায় আবির্ভূত হয়েছে। চরবাসী জানায়,প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামী এই মুনছুর সর্দার পূর্বের ন্যায় সন্ত্রাস চালিয়ে কৃষকের ধান লুটের নেশায় গ্রামে এসে দলীয় জার্সি বদলের চেষ্টা চালাচ্ছে। গ্রামবাসী জানায়,ভূমিদস্যু মুনছুর সর্দার বারবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে বছরের পর বছর চরের জনপদে রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠে। এব্যাপারে চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন,আসন্ন ধান কাটার মৌসুমে চরফ্যাশনের কোনো চরাঞ্চলেই কৃষকের ধানে লাঠিয়াল বাহিনীকে ছোবল মারতে দেয়া হবেনা। তিনি বলেন,চর লুটেরাদের বিরুদ্ধে তার পুলিশ বাহিনী জিরো টলারেন্স। এবিষয়ে অভিযুক্ত মুনছুর আহম্মেদ সর্দারের সাথে কথা হলে তিনি ভূমিদস্যুতায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। এদিকে ভূমিদস্যু মুনছরের অস্ত্রের মহড়া শুরু হওয়ায় চরফ্যাশনের ওই চরের কৃষকরা এখন আতঙ্কগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছেন। তাদের একটাই দাবী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ স্বাধীন হলেও দূর জনপদের এই চরাঞ্চল এখনো আওয়ামী সন্ত্রাসী মুনছুর বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তাই এখন সেখানকার কৃষকদের একটাই প্রশ্ন, এবার মৌসুমে আমাদের ঘাম ঝড়ানো কষ্টের বোনা ধান আমরা কি ঘরে তুলতে পারবো… !?
ভোলা নিউজ /টিপু সুলতান