ভোলার উন্নয়নে বিডিএফআই

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

দ্বীপ জেলা ভোলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ভোলা ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিডিএফআই)। মূলত ভোলাবাসীকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে ২০১১ সালে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ) নামে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে থাকা ভোলার কৃতি সন্তানদের নিয়ে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিডিএফআই) নামে এই সংগঠন কাজ করছে ভোলার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যের টানে ৩৩০ জন আজীবন সদস্য ও ১৫০ জন সাধারণ সদস্য তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মাধ্যমে চালাচ্ছেন বিভিন্ন সেবা মুলক উন্নয়ন কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভোলার মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করা এই সংগঠনের সাফল্যও কম নয়। এই বিষয়ে বিডিএফআই এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং ইন্টারন্যাশনাল কো অর্ডিনেটর মোঃ জহিরুল আলম ভোলা নিউজকে জানান- বিডিএফআই এর অন্যতম প্রধান সাফল্য দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে থাকা ভোলার কৃতি সন্তানদের ভোলার উন্নয়নে কাজ করতে একত্রিত করতে পারা। বিডিএফআই এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো হলোঃ-

ভোলার নদী ভাঙ্গন রোধে বিডিএফআই ভোলাবাসীকে সাথে নিয়ে ভোলা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন করে। বিডিএফআই এর প্রচেষ্টায় ভোলার নদী ভাঙ্গন রোধে নেদারল্যান্ডস চুক্তি করিয়ে দেশটির সরকারী দাতা সংস্থা ওরিও এর মাধ্যমে ১.৩৬ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে ভোলাকে ত্রিমাত্রিক জরিপ করানো হয়। জরিপে ১০০০ পৃষ্ঠার স্টাডি রিপোর্টে নদী ভাঙ্গন রোধে ভোলাতে ২৬ কি. মি. সিসি ব্লক এর মাধ্যমে নদী তীর প্রতিরক্ষার কাজ করার কথা বলা হয়। ঐ রিপোর্টের আলোকেই সমগ্র ভোলায় মোট ৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০০কোটি টাকার নদী তীর প্রতিরক্ষার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। এ কাজ সুচারু রুপে সমাপ্ত হলে ভোলা স্থায়ী কাঠামো পাবে বলেই আশা করা যায়।

বিডিএফআই এর প্রচেষ্টায় ভোলাবাসীর প্রাণের দাবি ভোলা-ঢাকা দিবা কালীন জাহাজ সার্ভিস চালু হয়। এতে করে ৪- ৪.৫ ঘন্টায় ভোলা ঢাকা যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে।

বিডিএফআই এর অান্তরিক প্রচেষ্টায় গত বছরের ৬ অক্টোবর নৌ-মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নৌ-সচিবের সভাপতিত্বে বহুপক্ষীয় সভায় লক্ষীপুরের ফেরি ঘাট মজু চৌধুরির হাট থেকে মতির হাটে স্থানান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে ফেরি যোগে ভোলা থেকে লক্ষীপুরের দুরত্ব ১২ কিমি কমবে, আর সময় বাঁচবে ১.৫ ঘন্টা।

করোনকালীন সংকটেও থেমে নেই বিডিএফআই এর কার্যক্রম। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভোলাবাসীকে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে থাকা ভোলার চিকিৎসক সন্তানরা। এই চিকিৎসক প্যানেলে রয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং কনসালটেন্টবৃন্দ। রয়েছেন ইউনানি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকও।

বিডিএফআই বিবিএস ক্যাবলস এর অর্থায়নে এক দল নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে ভোলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবানুনাশক ছিটানো, স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন, অসহায়দের মাঝে ত্রান বিতরন করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে মোঃ জহিরুল আলম জানান দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষকে প্রয়োজনীয় ও উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দিতে ভোলার ডাক্তার, সরকারি আমলা ও রাজনীতিবিদগণকে নিয়ে ভোলাতে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে সরকারের উচ্চ মহলে জোর প্রচেষ্টা চালানো হবে। তিনি আরো জানান যে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সংগঠনটির সদস্যদের চাঁদা ব্যাংক হিসেবে রক্ষিত রয়েছে যার মাধ্যমে ভোলাতে বিডিএফআই একটি বহুতল কমপ্লেক্স করার স্বপ্ন রয়েছে, যার এক একটি ফ্লোর থেকে দাতব্য চিকিৎসা, বেকার যুবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা, গণগ্রন্থাগার সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

বিডিএফআই এর বিভিন্ন কাজের সুফল পেয়ে ভোলাবাসীও কৃতজ্ঞ এই অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি। এ বিষয়ে ভোলা নিউজ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ভোলার উন্নয়নে বিডিএফআই এর কার্যক্রম সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। ভোলাতে বিডিএফআই এর মতো অন্যান্য সংগঠনগুলো ভোলাবাসীর জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করলে ভোলা হবে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সুন্দর, শিক্ষিত ও উন্নত জনপদের নাম।

SHARE