মনজু ইসলাম:বাল্য বিবাহ পড়ানোর সময় হাতেনাতে আটকের পর বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে সাজাপ্রাপ্ত মামলায় মোঃ রুহুল আমিন নামে এক আসামিকে ব্যতিক্রমধর্মী সাজা দিয়েছেন ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আদালতের জেলা ও দায়রা জজ এ.বি.এম. মাহমুদুল হক আসামিকে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছেন। ১৭ নভেম্বর ২০২০ ইং তারিখে ভোলার আদালতে যুগান্তকারী এ রায় ঘোষণা করা হয়।আসামি মোঃ রুহুল আমিন ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের চর আফজাল গ্রামের মৃত মৌলভী মোঃ আমিনুল হক এর ছেলে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ৯ ধারার লঙ্ঘনের অভিযোগে মোবাইল কোর্ট ২০০৯ অনুযায়ী আসামি মোঃ রুহুল আমিনকে গত ২ নভেম্বর ২০২০ ইং তারিখে দোষী সাব্যস্ত করে ৭ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রুহুল আমিন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আসামী আপীল করলে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত আপীল শুনানী অন্তে আপীল নামঞ্জুর করে আসামীর সাজা কমিয়ে ২ মাস কারাদণ্ড প্রদান করেন। উক্ত আদেশের অসম্মতিতে ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামীর পক্ষে তার আইনজীবী ফৌজদার রিভিশন-৪১/২০২০ মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার নথি পর্যালোচনা করে ও রিভিশন দরখাস্তের বিষয় উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে ফৌজদারী রিভিশন-৪১/২০২০ নং মামলাটি দোতরফাসূত্রে নামঞ্জুর করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভোলা কর্তৃক প্রদত্ত মোবাইল আপীল মামলা নং ২৬/২০ এর গত ২/১১/২০২০ ইং তারিখের আদেশ পরিবর্তিত আকারে এতদ্বারা বহাল ও বলবৎ রেখে আসামি মোঃ রুহুল আমিনকে প্রদত্ত সাজা কমিয়ে ২ মাস করার আদেশ রদ করেন ভোলা জেলা ও দায়রা জজ এ.বি.এম. মাহমুদুল হক। এছাড়াও রায়ের আদেশে বলা হয় যেহেতু আসামী প্রথমবারের মত এমন অপরাধ করেছেন এবং তিনি একজন মাওলানা এবং মাদ্রাসার শিক্ষক এমতাবস্থায় আসামীকে প্রদত্ত সাজা ভোগের পরিবর্তে কারাদণ্ডের বাকি সময়ের জন্য কিছু সামাজিক কার্যক্রমের শর্তে প্রবেশনে থাকবে। শর্তগুলো হলো- আসামী প্রবেশনে থাকাকালীন ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবে না, কোনো অপরাধে জড়াতে পারবে না এবং প্রবেশনকালীন সময় কমপক্ষে ১৪ দিন বাল্যবিবাহ নিরোধ সংক্রান্ত সভার আয়োজন করে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবেন। শর্তগুলো ভঙ্গ করলে তাকে আবারও কারাগারে যেতে হবে বলে আদেশ দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আসামি শর্তগুলো মানছে কিনা তা তদারকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভোলা প্রবেশন অফিসার মিহির কুমার পাইককে। প্রবেশন অফিসারকে আসামির আচরণ সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার আদেশও দেওয়া হয়েছে এই রায়ে। প্রবেশনে থাকা আসামী মোঃ রুহুল আমিন আদালতের বেঁধে দেয়া শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছেন বলে ইতোমধ্যে আদালতের কাছে একটি রিপোর্ট প্রদান করেছেন প্রবেশন অফিসার মিহির কুমার পাইক। রিপোর্টের মাধ্যমে তিনি জানান, প্রবেশনার রুহুল আমিন ১৮/১১/২০২০ ইং তারিখ হতে আমার তত্ত্বাবধানে আছেন। আগামী ১৮/১১/২০২১ ইং তারিখ পর্যন্ত তার কর্মকান্ড মনিটরিং করা হবে। প্রবেশন মেয়াদ শেষে বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করা হবে। প্রবেশনকালীন সময়ে ২৩/১২/২০২০ তারিখে তিনি প্রথম মাসিক সাক্ষাৎ প্রদান করেছেন। প্রবেশনের শর্তাবলী উত্তম রূপে পালন করছেন। তিনি প্রবেশনের শর্ত অনুযায়ী বাল্যবিবাহ নিরোধ সংক্রান্ত প্রথম সভার আয়োজন করেছেন ও তার ছবি এবং সভার রেজুলেশন জমা দিয়েছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারি কর্মকান্ড ও অপরাধ থেকে বিরত আছেন। এখন পর্যন্ত তার আচরন সন্তোষজনক। এদিকে এ রায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে ভোলা জেলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবীরা বলেন, ভোলার আদালতের এটি একটি উল্লেখযোগ্য ও ব্যতিক্রমধর্মী রায়। এই রায়ের মধ্যদিয়ে আসামি স্বাভাবিক জীবনযাপন করে সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে সংশোধনের বিরাট একটা সুযোগ পাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, এ রায় নিয়ে ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৬ টি মামলায় মোট ১৭ জন আসামীকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে ১৫ জন শিশু আসামী। এসব শিশু আসামীদের মানসিক বিকাশের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে শর্ত সাপেক্ষে প্রবেশনে মুক্তি প্রদান করেন।