ভোলায় প্লাস্টিকের ব্যবহার ও অবৈধ ইটের ভাটা বন্ধে নাগরিক সমাজের মানববন্ধন।

নিজস্ব প্রতিবেদক।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অবাধ প্লাস্টিকের ব্যবহার ও অবৈধ ইটের ভাটা বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবিতে ভোলায় নাগরিক সমাজের আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।বুধবার বেলা ১১টায় ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে কমিউনিটি রেডিও মেঘনা, কিশোরী দল ও কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মানববন্ধনে কিশোরী দলের সদস্যবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নারী নেত্রীবৃন্দ, সাংবাদিক, ছাত্র ও যুব প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। কোস্ট-ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট প্রধান এম.এ. হাসানের পরিচালনায় মানববন্ধনে সভাপত্বি করেন রেডিও মেঘনার ফোকাল ও যুগ্ন পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমী। মানববন্ধনে অঙ্গিনা মহিলা সমিতির সভাপতি বিলকিস জাহান মুমনমুন, জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিনিধি আবু তাহের, জেলা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও আইনজীবী কামাল উদ্দিন সুলতান, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন, কিশোরী দলের মারিয়া কিবরিয়া, কিশোরী শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক মালা বেগম বক্তব্য রাখেন।

 

এ সময় বক্তারা বলেন,পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার এবং বেআইনীভাবে ইটের ভাটা নির্মাণ। বর্তমান প্রজন্মের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মও এই স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অন্যান্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে না। প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাত এবং অবাধ ব্যবহার রোধ করতে হলে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলছে যা মাত্রারিক্ত স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত দূষনের কারণ। এগুলো বন্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দরা এসব দাবি তুলে ধরেন।

আবু তাহের বলেন, অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে। জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের কয়লা, পরিবশে দূষিত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ছে, এগুলো বন্ধে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে, আমরা আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখতে চাই।

বিলকিস জাহান মুমনমুন বলেন, প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাত এবং ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

কামাল উদ্দিন সুলতান বলেন, প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্লাস্টিক বর্জ্যের নিচে চাপা পড়বে মানবসভ্যতা। প্লাস্টিক দূষণ রোধের কার্যক্রমকে গতিশীল করে তুলতে ভোক্তা, উদ্যোক্তা, মিডিয়াকর্মী, নেতাকর্মী সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

মারিয়া কিবরিয়া বলেন, প্লাস্টিক মাটিতে পচতে সময় লাগে ৩০০-৪০০ বছর, এর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আমাদের খাবারের মধ্যে ঢুকে পড়ছে, আমরা আলসার ও ক্যানসার এর মতো নানাবিধ স্বাস্থগত ঝুঁকিতে রয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যতের পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে আপনারা কেমন বিশ্ব দিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে আপনাদের এখনই ভাবতে হবে।

মালা বেগম বলেন, ইটখোলার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফুসফুসে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের কারনে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির উপরের উর্বর মাটি প্রতিনিয়ত সরিয়ে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে, পরিবেশ দূষনকারী ইটভাটাগুলো বন্ধ করা এখন সমেয়র দাবী।

ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, ইটের পরিবর্তে আমাদের বøক ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। পলিব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাট, কাপড়জাত সামগ্রীর উৎপাদনে সহযোগিতা ও উৎসাহি করতে হবে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

এম এ হাসান বলেন, বিভিন্ন গবেষনা বলছে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন সিঙ্গেল প্লাস্টিক ব্যবহার হয় যা মাটি ও পানিতে নিক্ষিপ্ত হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদন বলছে বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশে যাচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক বা পলিথিন জাতীয় বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে কঠোর আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE