আন্তর্জাতিক ডেস্ক-ভোলানিউজ.কম,
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরে একটি বই প্রকাশ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বইয়ে থাকা অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্য ভুয়া। রাখাইন আর্কাইভ হিসেবে বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, তাঞ্জানিয়ার এবং মিয়ানমারের নিজস্ব জাহাজের একটি ছবি। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: পর্ব ১’ (মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো: পার্ট ১) শিরোনামের বইটি গত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়। ১১৭ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ। তবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সত্য কথনের এই বইয়ে তারা ব্যবহার করেছে পুরোপুরি মিথ্যা ছবি। আর সেখানে রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বইটিতে রাখাইনের আর্কাইভ ছবি হিসেবে একটি ছবি দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, পানিতে ভেসে থাকা লাশ একজন ব্যক্তি উঠানোর চেষ্টা করছেন। ছবির ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘বাঙালীদের স্থানীয় জাতিগোষ্ঠিদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে’।
তবে আসল কথা হলো, এই ছবিটি রাখাইনে হত্যাযজ্ঞের নয়। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বাঙালিদের নিহত হওয়ার ছবি।
অপর একটি ছবিতে দেখা গেছে হাজার হাজার লোক তাদের দেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেছেন। এই ছবি দিয়ে তার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশকতার সময়ে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে’। তবে আসলে ছবিটি হলো তাঞ্জানিয়ার।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে একটি জাহাজে অনেক মানুষ। এই ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে’। কিন্তু এটি আসলে মিয়ানমার সমুদ্র থেকে দেশটির নৌবাহিনীর আটক করা একটি অবৈধ অভিবাসীদের জাহাজ।
তবে সেনাবাহিনীর এই বই নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন দেশটির সরকার এবং সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ্য হিতাই। অপরদিকে বইটি না পড়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি মিয়ানমার তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মাইও মিন্ত মং।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা। সেসময় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে উপস্থাপন করে এই নির্যাতনের পক্ষে বহুবার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং দেশটির সরকার। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে মিয়ানমারের বলা এসব কথা কখনই গ্রহণ করেনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৩১আগস্ট-২০১৮ইং)