।। তাইফুর সরোয়ার।।
“বাবা” পৃথিবীর সবচেয়ে পরম আস্থার একটি শব্দ, ভরসা ও ছায়ার আরেক নাম। রাগ, শাসন আর রাশভারী চেহারার আবডালে এই মানুষটির যে কোমল হৃদয় তা মাতৃহৃদয়ের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সন্তানের সাফল্যের পিছনে যে মানুষটা নেপথ্য নায়কের ভূমিকায় কাজ করেন তিনিই হলেন বাবা। শত কষ্ট সহ্য করে, হাজার দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েও বাবা সন্তানকে হাসি মুখে বুকে আগলে রাখেন, দুঃখের ছোঁয়া লাগতে দেন না একটুও।
প্রতিটা সন্তানের কাছে বাবা মাথার ওপর স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো। বাবার বুক সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে পারেন তিনি। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের পথ চলা শুরু হয়। বাবাই সন্তানের প্রথম শিক্ষক, অনুপ্রেরণা ও আদর্শ।
আজ ২১ জুন, জুন মাসের ৩য় রবিবার, বিশ্ব বাবা দিবস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। উন্নত বিশ্বের সাথে সাথে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশেও বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
সন্তানের সাফল্যের পিছনে বাবার অবদান অপরিসীম। সন্তানের কাছে বাবার সম্মান ও গুরুত্ব প্রতিদিনের। তারপরও সারা বিশ্বের সন্তানেরা তাদের বাবার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকেন। সন্তানরা তাদের প্রিয় বাবাকে বিভিন্ন উপহার দেয়, শুভেচ্ছা বিনিময় করে দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখে। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তারা এই দিনে বাবার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়, সবার অলক্ষ্যে অশ্রু ফেলে। নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী বাবার জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে।
সন্তানকে তিল তিল করে বড় করা বাবা নামী এই মানুষটার পরম ইচ্ছা থাকে – শেষ বয়সটা সন্তান ও নাতি নাতনির সাথে কাটানোর। কিন্তু অনেক বাবার-ই এই ইচ্ছাটা পূরন হয় না। আধুনিকতার নামে সন্তানের ব্যস্ততার অজুহাতের কারণে অনেক বাবাকে জীবনের শেষ বয়সটা কাটাতে হয় অসহায় ভাবে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মধ্যে। করোনার এই মহাদুর্যোগেও দেখা গেছে সন্তান করোনা আক্রান্ত বাবা মাকে ঘর থেকে বের করে দিতে, হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া বাবা মায়ের মৃতদেহ গ্রহণ ও দাফন / সৎকারে অস্বীকৃতি জানাতে। তাই বাবা দিবসের মূল উদ্দেশ্য হোক বাবা সন্তানের মাঝে সুসম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি করা। ছোটবেলায় সন্তানের আনন্দের জন্য মুখে একটু হাসি ফোটাতে বাবা যেমন নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করেন নি, তেমনি বড় হয়ে সন্তানেরও উচিৎ বাবার প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করা, বাবার জীবনের শেষ বয়সটাকে আনন্দময় করে তোলা।
পৃথিবীর সব বাবার জন্য রইল ভালোবাসা। ভালো থাকুক সব বাবা।