ভারতে মুসলিম যুবতীর উপর পুলিশের নিষ্ঠুরতা

নিউজ ডেস্ক#
ভারতের দিল্লিতে মুসমানদের উপর চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাত, ও মসজিদ ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় উগ্রবাদী হিন্দুরা, দিন দুপুরে মুসলিম মা বোনদের উপর হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়ার মত ভয়াবহ দৃশ্য ও দেখা যায় দিল্লির রাস্তায়, দিল্লির পুলিশের এই নির্মমতার কথা ও উঠে আসে বিবিসি সহ গন মাধ্যমে,

দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হয়েছে। এই দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ এই দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা না করে বরঞ্চ হিন্দু দাঙ্গাকারীদের সহযোগিতা করেছে। পুলিশের এ ধরণের ভূমিকা নিয়ে কিছু ঘটনার অনুসন্ধান করে সত্যতা খুঁজে পায় বিবিসি।বিশ্বব্যাপী শুরু হয় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ঘটে গেল চরম দাঙ্গা। হিন্দু মুসলিম হানাহানির এক চরম রূপ পরিলক্ষিত হলো ভারতের রাজধানীত। এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদে দীর্ঘ দিন ধরে মুসলমান ও সাধারণ হিন্দুরা আন্দোলন করে আসছিল দিল্লিসহ ভারতের সব রাজ্যেই।

ক্ষমতাসীন বিজেপি এসব আন্দোলন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে বিকল্প পথ হিসেবে গ্রহণ করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির মত মন্দ দৃষ্টান্ত।

এই দিল্লিতে এর আগে ১৯৪৭ সালেও দাঙ্গা হয়েছে হিন্দু মুসলিমে। তারপর আরও বহুবার হাঙ্গামা হয়েছে সেখানে। বৃটিশরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ দেড়শ বছরে ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ভারতবর্ষে। তার ছোয়া বোঝা যাচ্ছে আজও রয়ে গেছে পূর্ণ মাত্রায়।

সাম্প্রদায়িকতার দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করার সময় নেই। এখনও দিল্লি জ্বলছে মুসলিম বিদ্বেষের আগুনে। অসংখ্য মানুষের ঘর পুড়েছে। মারামারি হয়েছে লাগাতার ৪৪ ঘণ্টা।

উগ্রবাদি হিন্দুরা মুসলমানদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়েছে। লাথি ঘুষি ধাক্কা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সাধারণ মুসলিমদের। ভাঙচুর করেছে দোকানপাট কারখানা। হামলা চালিয়েছে মসজিদেও।

মিনার ভেঙ্গে হনুমানের পতাকা টানানোর মত ঘৃণ্য অপকর্মও করেছে উগ্রবাদিরা। উগ্রবাদের কোনো ধর্ম হয় না। এদের পরিচয় হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্ম নয়। এদের পরিচয় একটাই। আর তা হচ্ছে এরা সবাই কট্টর সাম্প্রদায়িক চক্র।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দিল্লির ঘটনায় মর্মাহত। মুসলিম মরেছে বলেই যে আমরা কষ্ট পাচ্ছি তা নয়। যে কোনো ধর্মের মানুষই এমন অন্যায় নিপীড়নের শিকার হলে মুসলিম হৃদয় না কেঁদে পারে না। একটা পশুর কষ্টও মুসলমানের সহ্য হয় না।

বাঙালি মুসলমান তো অনেক সংবেদনশীল। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কিছু নামধারি মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলে দাঁড়ানোর চালাচ্ছে অপচেষ্টা। ভারতের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে তারা।

গাযওয়ায়ে হিন্দের ডাক দিচ্ছে প্রতিটি সমাবেশে। যে কোনো সময় ভারতে আক্রমণ করবে বলে স্ট্যান্টবাজি করে বেড়াচ্ছে এরা। গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাখ্যায় অদ্ভূত সব কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছে প্রপাগাণ্ডাকারীরা।

ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবে কয়েকটি জাল হাদীস দিয়ে বিশৃংখলার পরিবেশ সৃষ্টির অপপ্রয়াস প্রতি দিন বেড়ে চলেছে।

সহি হাদিসে রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে গাযওয়ায়ে হিন্দের একটি ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন।

ইবনে কাসীর রহ. তার আননিহায়া গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২০ নং পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বলেছেন, মুআবিয়ার শাসনামলে ৪৪ হিজরি সনে নবীজীর সে ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। নবীজীর উদ্দেশ্য ছিল সাহাবিদের সুসংবাদ দেয়া। তারা কোন কোন যুদ্ধে জয় লাভ করবে তার বিবরণ ছিল এধরনের বর্ণনায়। এসব বর্ণনা নিয়ে সাধারণ মানুষকে নানান ভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

আমাদের কোনো কথায় ভারতের মুসলমানরা আরও বিপদে পড়ে কি না তা ভাবা উচিত। তাদের উপকার করতে না পারলেও আমাদের দ্বারা নিপীড়িত মুসলিমদের কোনো ক্ষতি যেন না হয়।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমাদের কিছু আলেম ভারত অভিমুখে লংমার্চের ডাক দিয়েছিল। সাধারণ মুসুল্লিদের নিয়ে ভারতে আক্রমণের নিয়তেই তারা বের হয়েছিলেন। আমি তাদের সমালোচনা করব না। মূলত এ হচ্ছে আমাদের দেশের উগ্রপন্থী আলেমদের সারল্যের চিত্র। এতে ভারতে দাঙ্গা ফ্যাসাদ বাড়া ছাড়া কমেনি।

মূলত এখন বাস্তুহারা দিল্লির মুসলিমদের প্রয়োজন অর্থ সাহায্যের। ব্রিটেন অ্যামেরিকা থেকে মুসলিমরা সাহায্য করা শুরু করেছে। আমাদের দেশ থেকেও বিভিন্ন জনের উদ্যোগে সাহায্য তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দাঙ্গার শিকার মুসলিমদের ইতোমধ্যেই শুরু করেছে খাবারের ব্যবস্থা করা। শ্রমজীবি দরিদ্র মুসলিমদের দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের নতুন কর্ম সংস্থানের জন্যও প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তার।

গাযওয়ায়ে হিন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ভারতে প্রবেশ করলে প্রথম বাধার সম্মুখিন হবো ভারতের সাধারণ মুসলমানদের। জুতো পেটা করে আমাদের বাংলাদেশ ফেরত পাঠাবে ভারতীয় মুসলিমরাই।

বাঙালি বিবেকশূন্য ধর্মান্ধদের মত তারা নির্বোধ নয়। আপনি পুরো ভারতের যে কোনো মুসলিমকে জিজ্ঞেস করুন গাযওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে। সেখানে কেউ এসব শ্লোগানে বিভ্রান্ত হবার মত নেই।

নরেন্দ্র মোদি মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেন না আসতে পারেন সেজন্য বড় বড় হুংকার ছোড়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে ডান বাম কেউ মোদিকে পছন্দ করছেন না। কিন্তু কথা হচ্ছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তা নিয়ে মাতামাতি না করে কাজের কাজ করা উচিত।

মোদি বাংলাদেশে আসলে যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। মোদিকে ঠেকিয়ে দিতে পারলেই যে সাম্প্রদায়িকতা ভারত থেকে মুছে যাবে এমন নয়। অনেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জনেরও ডাক দিচ্ছেন।

চীনের উইঘুরে যখন মুসলমানদের নির্যাতন করা হচ্ছিল তখন পাকিস্তান সরকার তার প্রতিবাদে কিছুই বলেনি। চীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার স্বার্থে সব সময় চীনের মুসলমানদের নির্যাতনে তারা নিরব ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের মত আচরণ করা অসম্ভব মনে হয় না। এসব কিছু দু’দেশের সরকারের ব্যাপার। এ নিয়ে হাঙ্গামা বাধানোর চেয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের করণীয় কাজগুলি আমরা করতে পারি।

হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির পক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে এই এখনই।

বাস্তবে ভারতে মাত্র ৪৪ ঘণ্টার অত্যাচার চলেছে। আর চীনে বছরের পর বছর ধরে দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে অবর্ণনীয় অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেসব নির্যাতনের বর্ণনা দেয়াও কষ্টকর।

বিশ্ব মিডিয়ায় উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মূলত দিল্লির মুসলমানদের জন্য এসব ভণ্ডের কোনো দরদ নেই। আগে থেকে পুষে রাখা ভারত বিদ্বেষ প্রকাশের সুযোগকে তারা কাজে লাগাচ্ছেন। ভারত বিদ্বেষ ও পাকিস্তান প্রেমকেই তারা তাদের ধর্ম ও রাজনীতি বানিয়েছেন।

চীন ও ভারত উভয়ের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ। #সংগৃহীত।

SHARE