জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপেক্ষায় বিশ্ব নেতারা। সামাজিক ব্যবসা নিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতে এতদিন যারা অধীর আগ্রহে থাকতেন, নিতেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ, বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল যাঁর চিন্তা-দর্শন, এবার নতুন পরিচয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে পদার্পণ হচ্ছে ড. ইউনূসের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে জাতিসংঘে বিশ্ব মোড়লদের তিনি শোনাবেন নতুন বাংলাদেশ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা। বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্র মেরামতের জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম। জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ড. ইউনূস নিউইয়র্কে পা রাখছেন ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে। গত ১৫ বছরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন বিশ্বনেতারা। দমন-পীড়ন, সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করে সরকারের বৈধতা দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তৎকালীন সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও ছিল প্রাণহীন, অনেকটা নিয়মরক্ষার। তবে এবার সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বিশ্বনেতারা। ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সেখানে সাইড লাইনে এ দুই নেতার কুশলাদি বিনিময় হবে। জাতিসংঘ সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অব স্টেট) অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। সদস্য হওয়ার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ বিশেষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। জাতিসংঘে উপস্থিত সব সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানকে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ মিশন আশা করছে, ৫০টি দেশের সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা এ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সেটা নিশ্চিত। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি থাকবেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে নিউইয়র্ক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের জন্য সেখানে অবস্থানকালে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর বক্তৃতা করবেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে আসছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তাঁর সফরসঙ্গীদের দল হবে ছোট আকারের। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সংখ্যক প্রতিনিধির দল নিয়ে কোনো সরকারপ্রধান জাতিসংঘে যাননি।
ড. ইউনূসের নিউইয়র্কে পা রাখার একদিন আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্ক ত্যাগ করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। ড. ইউনূসের বক্তব্যে থাকবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের আশা-আকাক্সক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তার আহ্বান। এর বাইরে এ বছরের অধিবেশনে দ্বন্দ্ব নিরসন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার মতো বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।