অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
পাকিস্তান ও চীনের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল আখ্যা দিয়ে বিএনপিকে কোনো সুযোগ না দিতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি নীতিনির্ধারণী সংস্থা ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বিএনপি ‘ভারত-বাংলাদেশ: ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গী’ নামে বৈঠক করে। এরই প্রেক্ষিতে এইচ টি ইমাম অভিযোগ করেন যে, ‘বিএনপি ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।’
তিন দিনের সফরে বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন এইচ টি ইমাম। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের কোনও বুদ্ধিমান সরকার এমন দলকে (বিএনপি) সমর্থন করতে পারে না।’
গত মে মাসে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নতুন সম্পর্কের বার্তা নিয়ে ভারত সফর করে এসেছে। ভারতবিরোধী অবস্থানকে ৮০ ও ৯০ দশকের রাজনীতির ভুল আখ্যা দিয়ে দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতাও চেয়ে এসেছে। আবার ভারতের পরামর্শ অনুযায়ী জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও মূল্যায়ন করছে তিনবার রাষ্ট্র চালানো দলটি।
সম্প্রতি বিএনপির প্রতিনিধি দলের এই ভারত সফর নিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘বিএনপি শুরু থেকেই ভারতবিরোধী এবং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আঁতাত করে ভারতের ক্ষতি করতে চায়।’
‘বিএনপি আজ জামায়াতে ইসলামীর বর্ধিত অংশে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে আপনার (ভারত) দেশের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। আমি জানি যে, বিএনপির কয়েকজন নেতা ভারত সফর করেছে। তাদের রেকর্ড দেখলে দেখবেন, যে তারা কেবল পাকিস্তান সমর্থক নয় বরং চীনেরও কঠোর সমর্থক। তারা পরস্পর ভারতের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করে।’
‘বিএনপি এক্ষেত্রে ভারতকে বিভ্রান্ত করতে সফল হবে না। কারণ, নয়াদিল্লি এমন কোনও দলকে সুযোগ দেবে না, যারা ভিন্ন স্বার্থে কাজ করে এবং যাদের নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তান ও সন্ত্রাসীদের আঁতাত রয়েছে।’
এইচ টি ইমাম আশা প্রকাশ করেন- খুব দ্রুতই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হবে। তবে এই সমস্যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন তিনি।
ইমাম স্বীকার করেন যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তিস্তা ইস্যুকে সমস্যা হিসেবে দাঁড় করাবে। তবে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
‘তিস্তা চুক্তি আজ না হয় কাল স্বাক্ষরিত হবে। এটা নিয়ে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এটা উভয় প্রতিবেশীর মধ্যে বড় কোনো সমস্যা নয়। এ কারণে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, শুধু আলোচনা এবং পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।…আমরা এক একটি করে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি।’
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হবে বলেও উল্লেখ করেন এইচটি ইমাম।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, কোনো দল পরপর দুই বার ভোট বর্জন করলে তার নিবন্ধন থাকবে না।
জাকির নায়েককে বাংলাদেশে জায়গা দেওয়া হবে না
ভারতের বিতর্কিত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েককে বাংলাদেশের মাটিতে কখনও জায়গা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। শনিবার দুপুরে দিল্লির গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হবে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে ইমাম বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশে জায়গা দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ।’
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে সংকল্পবদ্ধ সরকার। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে শত্রুভাবাপন্ন এমন কাউকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।’
২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর অভিযোগ ওঠে হামলাকারীদের অন্তত দুইজন জাকির নায়েকের বক্তব্য অনুসরণ করতো। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ তৈরি ও উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে মামলা করে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা-এনআইএ। বেশ কয়েকবার তার বিরুদ্ধে সমন জারি হলেও তিনি আদালতে যাননি।
ওই বছরই আরও কয়েকটি অভিযোগের মুখে ভারত ছেড়ে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ঘুরে সর্বশেষ মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাকির নায়েককে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায় ভারত। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত চাওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কিত এ বক্তা ভারতে ফিরছেন বলেও জানায় দেশটির গণমাধ্যম।
তবে শুক্রবার (৬ জুলাই) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার দেশে (মালয়েশিয়া) আশ্রয় নেয়ার পর জাকিরকে নিয়ে কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। তাই তাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সূত্র: পিটিআই,
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৮জুলাই-২০১৮ই)