নিউজ ডেস্কঃ
বাবা তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি শিরনামে লেখাটি ভোলা আদর্শ একাডেমির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবুবকর ছিদ্দিক এর পোস্ট থেকে নেয়া। পোস্টটি ভোলা নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো….
“বাবা আরিফ, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো। তোমার বিয়ে ফাইনাল, আগামী ১৭ রমজান, ইসলামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন, ইসলামের প্রথম বিজয়,বদর যুদ্ধের দিন। ঐদিন আমাদের পীর সাহেব থাকবেন, তিনি বিবাহ পড়াবেন। মেয়ে আমাদের এক পীর ভাইয়ের, দাওরা হাদিস পাশ, খুব ভাল মেয়ে, খুব পর্দানশীল,হাতে পায়ে মৌজা পড়ে। হাজারে একজন।
আরিফ দাওরা হাদিস শেষ করে ফিকাহ নিয়ে পড়া শুরু করেছে, সে মুফতি হবে, খতিব হবে, বড় আলেম হবে। অনেক স্বপ্ন। তাকে না বলে বাবা মা বিয়ে ফাইনাল করেছেন। সে জানে বাবা মা কাজটা ঠিক করেনি। যার সাথে বিয়ে, যার সাথে ঘর সংসার, যে জীবনের সুখ দুঃখের সাথী হবে। অথচ, কেউ কাউকে দেখেনি, বুঝেনি, জানেনি। এটা কেমন বিয়ে ?
এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান হলে মা বাবা কষ্ট পাবে। আঘাত পাবে। বেয়াদবী হবে। জীবন মানি সমুদ্র। এখন উত্তাল সাগরের ঢেউ চলেছে হৃদয়ে। একদিকে পরিবারের মুখ রক্ষা আর একদিকে নিজের জীবনের উতাল পাতাল ঢেউ। রাতে আর ঘুম হয়নি। বিয়ের মাত্র ৩/৪ দিন বাকী। তার সিদ্ধান্ত বিয়েতে দ্বিমত করবে না। কিন্তু এখন বাড়ি যাবে না। এখন আখত হবে। চাইলে সম্মতি দিবে। বিয়ের দিন বাবা তাকে টেলিফোন করল। বাবাকে সম্মতি জানিয়ে জরুরী কাজ দেখিয়ে বাড়ি যায়নি। দুই পক্ষের উপস্থিতিতে পীর সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।
ঈদুল ফিতরের পর বধু আনার প্রোগ্রাম। বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বরকে লাগেনি। সকলের বিশ্বাস বর চলে আসবে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন বর আসল না। বর পক্ষ কনে নিয়ে আসল। জানালেন বর রাতেই বাড়িতে চলে আসবে। কনে পক্ষ খুব আপত্তি করেনি। কারন সবই ঈমানদার মানুষ। একই পীরের ভক্ত। যে বিয়ে স্বয়ং পীর সাহেব পড়িয়েছেন, তাতে সংকট হতে পারে না। জামাইর অনুপস্থিতির বিয়ে যে ৯০% ভাগ ভেংগে যায় তা তাদের মাথায় ঢুকেনি।
বর ছাড়া কনের বাসর ঘরের রজনী আমাবস্যার অন্ধকার রাত হতেও ভয়াবহ। দ্বিতীয় দিনও বর আসেনি। ৩য় দিন বর বাড়িতে এসেছে। কিন্তু নব বধুর সাথে দেখা করেনি। অন্যত্র রাত্রি যাপন করেছে। এসব একটি নব বধুর হৃদয়ে কেমন ঝড় তুফান সৃষ্টি করেছে, তা শুধু ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।
কনের দুঃখ ব্যদনার সংবাদ মায়ের কাছে চলে আসে। মা পাগলের মত ছুটে যান জামাই বাড়িতে। দেখলেন ঘটনা সত্য। জামাইর সাক্ষাত মিলেনি। বর পক্ষ দুঃখ প্রকাশ করল। ক্ষমা চাইল। মা কিছু না বলে নিজের মেয়ে নিয়ে চলে আসলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন ঐ বাড়িতে আর নয়।
কিছু দিন পর বর পক্ষ কনে পক্ষের বাড়িতে আসল। জানালেন, ছেলের শারীরিক সমস্যা ছিল যা সে প্রকাশ করেনি। এখন তাকে ডাক্তারের নিকট হাজির করা হলে ডাক্তার জানালেন, সমস্যা আছে তবে ২/১ মাসের ভিতর সুস্থ্য হয়ে যাবে। তাই ২ মাসের সময় চাইলেন।
মা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। ১৫/২০ দিনের মাথায় বিয়ে ভেংগে যায়। যদিও পরবর্তিতে সেই ছেলে বিয়ে করে, এক সন্তানের বাবা হয়েছে।
এই মেয়ের সাথে নতুন করে এক যুবকের বিয়ের কথাবার্তা অনেক দুর আগায়। পুর্বের বিয়ের সংবাদ শুনে ছেলে পক্ষ পিছিয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটি সকল খোজ খবর নিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত।
আমাদের সমাজে কোন মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ছেলে বা ছেলের পক্ষ মেনে নিতে চায় না। অথচ একই ঘটনা ছেলেদের হলে সেটা নিয়ে খুব সমস্যা হয় না। একটি অনৈসলামিক কালচার চালু হয়ে আছে। নিজেদের কন্যা নিয়ে এমন সমস্যা হলে সেটা জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দেয়ার আপ্রান চেষ্টা চলে।
দোয়া করি, এই দুঃখ ব্যাদনার সাগরে ভাসমান যোগ্য ধার্মিক শিক্ষিত মেয়েটির জন্যে আল্লাহ একজন যোগ্য ধার্মিক বরের ব্যবস্থা করে দিন। যাকে নিয়ে ভাবনা তার কপালে এই নারীর ভাগ্য নির্ধারিত থাকলে তা যেন সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদের নেক নিয়ত এবং শ্রম চেষ্টা সফল করুন।”
( একটি সত্য ঘটনা হতে সংক্ষেপ)