সোহেল মাহমুদঃ
আজ আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, আমরা কি গত কয়েক বছর ধরে পুরো স্বাস্থ্য খাতের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছি? আমরা এই কারণেই কি অধিকতর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি না? আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি বর্তমান বাজেট বরাদ্দের ধারা অব্যাহত রাখি, তবে আমরা এই রকম আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বো। খোলামেলা এই কথা গুলো বলেন কোস্ট ট্রাস্ট এর নির্বাহি পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
বিগত চছরের বাজেটের হিসেব দিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রতি ১০ হাজার লোকের জন্য আমাদের প্রায় ৬ থেকে ১০ জন চিকিৎসক রয়েছেন, এই সংখ্যাটি চীনে ৪০ জন এবং কিউবায় ২৫ জন। গত তিন বছর ধরে মোট বাজেটের আকারের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪.৯২%, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.০৫% এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এটি ছিল ৫.২৩%। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুসারে একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ হওয়া উচিৎ দেশটির জিডিপির ৫% বা মোট জাতীয় বাজেটের ১৫%। কিন্তু বর্তমানে এই বরাদ্দ আমাদের দেশে জিডিপির ১% এরও কম। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন, নেপালে এটি ৬.১৯%, ভারতে ১.২৪%, শ্রীলঙ্কায় ৩%, ভুটানে ৩. ৩.৫% এবং মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ১১% । আমাদের দেশের দরিদ্র পরিবারগুলিকে তাদের পকেট থেকেই স্বাস্থ্যের ব্যয়ের ৬০-৬৫% মেটাতে হয়। জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি লোক পুষ্টিহীনতায় ভূগছে, যা প্রতি বছর উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির কারণ। দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষের নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে এবং প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষের উন্নত পয়নিষ্কাশন বা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। এতকিছুর পরেও আমাদের চিকিৎসকরা গত দশকগুলিতে মাতৃমৃত্যুর হার এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সহযোগিতা করেছেন।
আমরা যদি স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে না বাড়াই, তবে অনিবার্যভাবে বর্তমানের মতো আরও বিপর্যয় সামনে আসবে। আমার আশংকা, ভবিষ্যতে আরও মহামারী হবে, আমরা ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়াকে অবহেলা করেছি। আমরা চিকিৎসকদের দোষারোপ করি, এটা অন্যায়, কারণ সমস্যার মূল কারণ স্বল্প বাজেট। চিকিৎসকরা এবং চিকিৎসা পেশায় সম্পৃক্তদের বক্তব্য যথাযথভাবে তুলে ধরার সুযোগ কম, কারণ তাদের মধ্যে জাতীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত অনেক দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। পেশাগত বিষয় বা জাতীয় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে তাঁদের চিন্তা করতে দেওয়া হয় না এবং ঐ বিষয়গুলোতে কথা বলার জন্য তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার খুব কমই সুযোগ আছে। তরুণ চিকিৎসা পেশাদারগণ বেশিরভাগই তাদের সিনিয়র এবং নেতাদের দোষারোপ করেন। সিনিয়রদের অবশ্যই তাদের উত্তরসূরিদের অভিযোগ-ক্ষোভগুলো যাচাই করতে হবে। তাদেরকে পেশাগত বিষয়গুলিতে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, তাঁদের সংগঠিত করা দরকার।