টিপু সুলতান।। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপির) প্রতিষ্ঠাতা,বাংলার পরিকল্পিত উন্নয়নের কারিগর। আধুনিক ভোলার রুপকার। সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মরহুমর নাজিউর রহমান মঞ্জুর ১৪ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। আজও পরিকল্পিত এই উন্নয়নের কারিগরকে খুজে বেড়ায় বাংলার মানুষ। ১৯৪৮ সালে ৩০শে জুন ভোলা সদরের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাজিউর রহমান মঞ্জু। ২০০৮ সালের ৬ই এপ্রিল তিনি লিভারে সমস্যা জনিত কারণে মাত্র ৬০ বছর বয়সে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ ভোলার কৃতি সন্তান মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর স্মরণে মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি দোয়া, আলোচনা সভা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। এছাড়াও পারিবারিকভাবে মরহুমের জন্য দোয়া মুনাজাতের আয়োজন করা হয়। আজকের এই দিনে ভোলার কৃতি পুরুষ মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুকে দলমতের বাহিরে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে ভোলা লাখো মানুষ।
তৎকালীন এলজিআইডি মন্ত্রী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র ও আধুনিক ভোলার রুপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জুন ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মিয়া পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম বজলুর রহমান মিয়া। ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ২য়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এম.কম পাস করেছেন। প্রথম জীবনে মতিঝিলে তিনি এশিয়াটিক ট্রাভেলের সাথে জড়িত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। রাজনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলন সফল। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মাস সংসদের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের ১৮ দফা বাস্তবায়ন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তৎকালীন সময়ে জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়াও ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পূর্বে নাম ছিল ঢাকা মিনিসিপাল কর্পোরেশন তা পরিবর্তন করে তার নাম দেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন। এরশাদের আমলে তিনি ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় দফতরের মন্ত্রী। তিনি ভোলা জেলার সকলের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার জনহিতকর কর্মকা-ে ছোঁয়া পায়নি এমন এলাকা খুবই বিরল। ভক্তরা তাকে “হাতেম তাই” বলে সম্বোধন করতো। নিজের অর্থে নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ব্যাপকভাবে জনসেবামূলক কাজ করেছেন। তার আশা-আকাঙ্খা ছিল অনেক। তিনি বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি ভোলাকে সিঙ্গাঁপুর বানিয়ে ছাড়ব’। তার কথার সাথে কাজের মিল রেখেই এগিয়েছেন তিনি। ভোলার উন্নয়নের স্বার্থে নিয়ে ছিলেন নানা রকম পরিকল্পনা। আধুনিক ভোলার রুপকার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নও করেছেন অনেক কাজ।
শিক্ষা বিস্তারঃ
১৯৮৬ সালে ভোলার এমপি নির্বাচিত হয়ে মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু শিক্ষা বিস্তারে জোর দেন। তিনি মনে করেন একটি জাতি যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে তবে তারা অতিদ্রুত উন্নতি করতে পারবে। সেই লক্ষ্যে তিনি ভোলা শিক্ষার মান বিস্তারের জন্য ৪টি কলেজ ও ১০০ উপরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর পাশাপাশি তিনি শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভোলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিয়ে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য একটি তহবিল গঠন করেন। এই তহবিল থেকে তিনি বিভিন্ন গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন শিক্ষার উপকরন দিয়ে সাহায্য করতেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার নামে ভোলার উত্তরের পরানগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ’ জেলার মধ্যে অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসাবে গড়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নঃ
স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দেড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময়ে অসহায় দুস্থদের সেবা দেয়ার জন্য বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করতেন। বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করতেন। তিনি জেলার চিকিৎসা সেবার জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল নির্মাণ করেন। সদর হাসপাতালে তিনি প্রথম রক্ত দান করে একটি ব্লাড ব্যাংকও স্থাপন করেছিলেন। তিনি ভোলাবাসীকে মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিনামূল্যে ৪ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করেন। তার দেয়া টিউবয়েলেগুলো আজও উপকারভোগীরা সুফল পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তিনি জেলা পশু হাসপাতাল নির্মান করেন।
যোগাযোগ ব্যাবস্থাঃ
মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু ভোলা জেলার সর্বস্তরের জনগনের যোগাযোগের সুবিধার জন্য রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালবার্ট নির্মান করেন। তিনি প্রথম ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক নির্মান করেন। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়েও যোগাযোগ ব্যাবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এছাড়াও তিনি হ্যালিপ্যাড, ভোলার বৃহত্তম বাস টার্মিনাল নির্মান করেন। তিনি ঢাকার সাথে ভোলার যোগাযোগের জন্য লঞ্চ টার্মিনাল নির্মান ও লঞ্চ যাতায়াতের ব্যবস্থার সুযোগ করে দেন।
শহরের উন্নয়নঃ
ভোলা শহরকে ঢাকার পরে দ্বিতীয় রাজধানী রুপ দেয়ার জন্য মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু প্রথমে ঢাকার বাহিরে সর্বপ্রথম ভোলাতে সোডিয়াম বাতি স্থাপন করেন। ভোলার উন্নয়নের স্বার্থে তাকে মামলা এমনকি কারাগারে যেতে হয়েছে। এছাড়াও তিনি ভোলা পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণী উন্নীতকরণ করেন। ১০টি শহর উন্নয়নের মধ্যে ভোলা শহরকেও তালিকাভুক্ত করে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন।
গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ প্লান স্থাপনঃ
তার আমল থেকেই শাহবাজপুর গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। ভোলাকে বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটানোর জন্য ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্থাপন করেন। তিনি জেলা প্রশাসক ভবন, এসপি অফিস, উপজেলা ভবন, জজ কোর্ট, শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক নির্মান, ভোলাকে বিভিন্ন দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বনায়ন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। তিনি ভোলাকে পর্যটন শিল্পী উন্নয়ন করার বিভিন্ন রেস্ট হাউজ নির্মান করেন। এছাড়াও তিনি অসহায় দুস্থদের সাহায্যের জন্য তার নিজস্ব তহবিল থেকে যাকাত দিতেন। জাতিকে সাংস্কৃতিক মনা করতে পারলে জাতির মধ্যে সহিংসতা কমে আসবে বলে তার ধারণ ছিল। তাই তিনি সাংস্কৃতির ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ ছিলেন।
আজ তিনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তার উন্নয়নের এক অনন্য র্কীতি। তার এই র্কীতি ভুলার নয়। তার উত্তরসূরী মেধাবী আপষোহীন নেতা ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। তার মেঝো ছেলে ড. আশিকুর রহমান শান্ত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সদস্য। তার ছোট ছেলে ব্যারিষ্টার ওয়াশিকুর রহমান অঞ্জন বাবার গড়া ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দেখা শুনা করছেন।
আধুনিক ভোলার রুপকার মরহুল নাজিউর রহমান মঞ্জুর ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভোলা জেলার বিজেপি ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলার বিজেপির নেতারা। ভোলার গরিবের নেতাকে পরপারে ভালো রাখবেন এমনটাই কামনা করেন জন্ম থেকে পানিতে ভেসে চলা ভোলা দ্বীপের নাজিউরের আত্নার আত্নীয় গরিব দুঃখী মেহনতি মানুষরা।