ইয়ামিন হোসেনঃ
ভোলা নিউজ-২১.১১.১৮
বন দস্যুদের কবলে ভোলার খেজুরের গাছ। বনদস্যুরা গাছ গুলো কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেন। আর ইট ভাটার মালিকরা কম দামে বেশি জ্বালানি পেয়ে তা পুড়ে সভার করছেন মাস্তির সাথে। আর এ ধরনের ইট ভাটার মালিক আর বনদস্যুদের প্রকাশ্যে মদত দিতেন ভোলার সাববেক এডিএম আব্দুল হালিমদের মত অফিসাররা। এ কারনেই দিন দিন ভোলা থেকে বিলুপ্তির পথে আমাদের শীতের পিঠে পায়েসের কালের চির চেনা উপাদান খেঁজুরের গাছের রস।
কি আর করা তার পরেও ভোলায় শীতের বার্তার সাথে সাথে গাছি বা সিঁউলিরা ব্যস্ত হয়ে পরেছেন খেঁজুরের রস আহরণের জন্য। শীতের হিমেল হাওয়ার মধ্যে গাছিরা রস আহরণের আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ করেছেন। আবহমানকাল থেকে গ্রামবাংলার আদি ঐতিহ্যের সাথে খেঁজুরের রস ও শীতকাল একাকার হয়ে আছে।শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা। যার মূল উপাদান খেঁজুরের রস, ঝোলাগুড় ও পাটালীগুড়। শীতের সকালে রোদ্রে বসে পিঠা খেতে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলের ভাল লাগে। তাই এসময় গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা ও পায়েস তৈরির ধুম পরে যায়। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে। তাই প্রতিবছর খেঁজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুুতি শুরু হয় শীতের শুরুতেই। এবারও খেঁজুরগাছ কাটার কাজ শেষ করেছেন গাছি বা সিঁউলিরা। গাছের মাথায় একইস্থানে অনেক খানি বাকল তুলে সেখানে হাঁড়ি বেঁধে এ রস সংগ্রহ করছেন।উপজেলার অনেক গ্রামে খেজুুুর গাছের মালিকরা আগাম রসের জন্য গাছিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে রেখেছেন। সেই টাকায় অনেকে রস সংগ্রহের বিভিন্ন উপকরণ কিনে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। উপজেলার ইলিশা চর আনন্দ গ্রামের এক গাছি জানান,আমি একটুু আগ থেকেই প্রস্ততি নিয়ে থাকি কেননা খেজুর গাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পরি। কারণ এ অঞ্চলে রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় হয়।এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেঁজুরের গুড়েরও বেশ কদর থাকে। তারা আরো জানান, তাদের নিজেদের কোন গাছ নেই। অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন বলে জানান তারা। বাড়ির উঠানের একপাশে স্তুপ করা থাকে অসংখ্য ছোটবড় রসের হাঁড়ি। পুরুষেরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আর মহিলারা বাড়ির উঠানে উনুনে মস্ত পাত্রে রস জ্বাল দেন। আর সারাদিন ধরে চলে জ্বালাইয়ের মাধ্যমে রস শোধন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে রসের মিষ্টি গুড় তৈরি হয়। এসময় পুরো এলাকা খেঁজুরের রসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে। উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেঁজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এখনো বেশকিছু খেঁজুর গাছ দেখা গেলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে এ গাছের সংখ্যা।
সরকার ও বনবিভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকির মাধ্যমে আবারো খেঁজুরগাছের সংখ্যা বাড়বে, রক্ষা পাবে পরিবেশ বিপর্যয় একই সাথে টিকে যাবে ভোলার ঐতিহ্যবাহী শীতের চিরায়ত উৎসব খেঁজুরের রসের পিঠে পায়েস, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের।