পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ এ এক ভিন্ন ধরনীয় চিত্র পটুয়াখালী এলজিইডির। টাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা, না দিলে আবার ফাইল ছুড়ে মারে ঠিকাদারের গায়ে। পৌর এলাকা উন্নয়নের নামে ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতিতে সমালোচিত এলজিইডির পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তারের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই টেন্ডার দুর্নীতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বন্ধ করে দিলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং উচ্চ দপ্তরকে ম্যানেজ করতে তার ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষ বাহিনীর হাতে ঠিকাদারকেও লাঞ্ছিত হতে হয়। এছাড়া বিলের চেক আটকে ঘুষ আদায় করা, প্রাপ্ত কাজের অনুকূলে অনাপত্তিপত্র প্রদানে ঘুষ নেওয়া, চুক্তিপত্র ও বিলের ফাইল আটকে ঘুষ আদায়ের ঘটনায় এবং জামানতের চেক প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় অতিষ্ঠ একাধিক ঠিকাদার ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রকৌশলীর এই ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনা পটুয়াখালীতে ওপেন সিকরেট হলেও প্রকল্প জটিলতার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না কোনো মহল। চলতি মাসে নানা অনিয়মের অভিযোগে পটুয়াখালী এলজিইডির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড উপ-সহকারী কামাল হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হলেও প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তার রয়েছেন বহাল তবিয়তে। একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ- গত জুন ফাইনালে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ পরিশোধের জন্য এলজিইডি কর্তৃক বিল প্রস্তুত করে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে চেক গ্রহণ করবে। অথচ নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তার নিজেই অর্ধশত চেক কবজায় নিয়ে ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। যে ঠিকাদার তাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে সক্ষম হয়েছে তাকে চাহিদামতো বিল পরিশোধ করেছেন তিনি। এছাড়াও বিল পরিশোধের সময় বিশেষ জামানতের অজুহাত দিয়ে প্রায় অর্ধশত ঠিকাদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন তিনি। এ ঘটনায় পটুয়াখালী পল্লি স্টোরের ঠিকাদার গোলাম ছরোয়ার বাদল প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তার ৫-৭ পারসেন্ট অর্থের বিনিময়ে দরপত্রের গোপন রেট ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর প্রাপ্ত ঠিকাদারকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (ঘড়ধ) দিতে এক থেকে দেড় পারসেন্ট নেন তিনি। কোনো ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম, সাগর মৃধা, আলম মোল্লার অভিযোগ, তিনি জুন ফাইনালে কাজের অনুকূলে ঠিকাদারের চেক জিম্মি করে তিন পারসেন্ট কমিশন হাতিয়ে নেন। আব্দুল সাত্তারের এই ঘুষ বাণিজ্যে একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়াও লটারিতে অংশ নিয়ে কাজ পাওয়ার পর নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (ঘড়ধ) দিতে এক পারসেন্ট, চুক্তিপত্রে এক পারসেন্ট হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া বিলের ক্ষেত্রে তিন পারসেন্ট দিতে হবে বলে অলিখিত একটি আদেশ জারি করেন তিনি। ফাইলের সঙ্গে টাকা না দিলে দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখেন। তার কাজে সহায়তা করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন ও কথিত ভাতিজা মাজাহার। এনামুল হক নামে এক ঠিকাদার বলেন- জামানতের চেক প্রদান বাবদ দেড় পারসেন্ট অর্থ দাবি করেন তিনি। আপত্তি জানালে ফাইল নিয়ে তার রুমে কেন ঢুকেছেন বলে পিয়নকে গালাগালি করেন। প্রতিনিয়িত আনসার বাহিনীর প্রোটকল নিয়ে চলাফেরা করেন। প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ি চালাচ্ছে সুমন নামে এক বহিরাগত। প্রকৌশলীর অফিস কক্ষের পাশে কম্পিউটার রুম পরিচালনাসহ কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করেন তার স্নেহধন্য মামুন নামে আর এক বহিরাগত। অর্ধশত ঠিকাদারের অভিযোগ, এলজিইডি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই রকম প্রকৌশলী পটুয়াখালীতে আসেনি! পটুয়াখালী সদর রোড এলাকার এক ঠিকাদার ইব্রাহীম ক্ষোভে বলেন, ৬০ লাখ টাকা বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে বসেন। তিনি অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে ফাইল ছুড়ে মারেন নির্বাহী প্রকৌশলী। নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এসব অভিযোগ অবহিত করা হলে তিনি অভিযোগগুলো শুনে বলেন আমি এখন ব্যস্তা আছি, পরে কথা বলব। এদিকে তার সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর একাধিক মহল থেকে সংবাদ না করতে অনুরোধ করা হয় প্রতিনিধিকে।২০১৯-২০ অর্থবছরে আব্দুল সাত্তার দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহার সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্পের ১২টি গার্ডার ব্রিজ ও চারটি লোহার সেতুর দরপত্র আহ্বান করেন। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পের দরপত্রে ব্যবহার করা হয় ভৌতিক টেন্ডার আইডি। এছাড়াও টেন্ডার কমিটি, টেন্ডার যাচাই-বাছাইসহ দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির আশ্রয় নেন তিনি।