পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় বাধ্য হয়ে নিজেদের অর্থায়নে ভাসমান সেতুটি নির্মান করে এলাকাবাসী। পটুয়াখালীর কলাপাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়নে পাখিমারা খালের উপরে এ বিশাল ভাসমান সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দেশের উন্নয়নে শুধু রাষ্ট্র নয়; নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর তার প্রমাণ করে দিয়েছেন কলাপাড়ার সুবিধা বঞ্চিত কৃষক-শ্রমিকসহ সকল পেশার মানুষ। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রাম সংলগ্ন পাখিমারা খালের ওপর গ্রামবাসীর অর্থায়নে এবং স্বেচ্ছা শ্রমে নির্মান করা হয়েছে ভাসমান সেতুটি । সরকারী উদ্যোগে ব্রিজ নির্মান সময় সাপেক্ষতার বিবেচনায় স্থানীয় কৃষকরা যোগাযোগ অচল অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের পরিকল্পায় প্লাস্টিকের ড্রাম এবং কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছে ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ০৪ ফুট প্রস্থ্যের ভাসমান সেতুটি। কৃষক আলমগীর হোসেন জোমাদ্দার বলেন, দুই মাস আগে এই হানের ব্রীজটি ভাইঙ্গা খালে পইর্যা যায়। হেইয়্যার পর আমাগো দূর্ভোগ শুরু হয়। নীলগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের সহাস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা, শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন এইখান থেকে হাজার হাজার মণ কৃষি পন্য বিভিন্ন হাট-বাজার এবং মোকামে প্রেরণ করা হয়।
সমাজের অতি জরুরী উন্নয়ন কাজ শুধু রাষ্ট্রের মাধ্যমেই করতে হবে এমন কোন কথা নেই, কিছু কাজ রাষ্ট্রের নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে করলে দেশের উন্নতি হয়। এভাবে কথা গুলো বলছেন আর হাতুড়ির আঘাতে লোহা দিয়ে সেতুর কাঠ আটকাচ্ছেন মো. জাকির হোসেন গাজী।
সেতুটি নির্মানের জন্য ৭২টি প্লাস্টিকের বড় ড্রাম, ২৫০ কেপি চাম্পল কাঠ, ০৩ মণ লোহা (পেরেগ), ০৩ মণ প্লাস্টিকের রশি। নির্মান কাজে স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করেছে এলাকার ১২ জন কৃষক।
সেতুটি এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যে, সেতুর ওপর দিয়ে পন্যবাহী ভ্যান এবং যাত্রীবাহী ভ্যান চলাচল করতে পারবে। সেতুটির দুই পাশে মোটা রশি দিয়ে খালের দুই মাথায় শক্ত করে বাঁধা রয়েছে এবং ড্রামগুলি এমন ভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে। সেতুটি নির্মানে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এসকল টাকা কুমিরমারা, মজিদপুর গ্রামের ২০০ পরিবার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবার প্রতি ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি টাকা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে। কৃষক-জনতার উদ্যোগে ভাসমান এ ব্রিজ নির্মানের খবরে উপকূলীয় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটা আসছে সেতুটি দেখার জন্য। কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা খালের ওপর নির্মিত হয় ব্রিজটি। গত ০৫ আগস্ট রাতে ভেঙ্গে পরায় এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে ছিলো। এবিষয়ে এলজিইডি প্রকৌশলী মোহর আলী বলেন, গুরুত্বূপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর গার্ডার ব্রিজ নির্মানের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে এলজিইডি’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। ব্রিজটি পুনঃ নির্মান কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় জনসাধারনে চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য যথাযথ বরাদ্দ পেলে ব্রিজটি পুনঃনির্মান কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।