বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন খবরটি নিশ্চিত করেছেন । মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৪টার পর জেলার পুরাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল্লাহ তাহেরের নেতৃত্বে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুইটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলও করেছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে দুইটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দুই অভিযুক্ত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন, মামলার এজাহারভূক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর। সোমবার বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নাজমুল হাসানকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে একই আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তার আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সাগর ও সাইমুন নামের অপর দুইজনের জন্য পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তাদেরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি তদন্ত হুমায়ুন কবির।
অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাইচেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. শাহ আলম গাজী জানান, ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবরে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে ৫-৬ জনের একটি সন্ত্রাসী দল বরগুনার চরকলোনি এলাকার আক্তারুজ্জামান নাসিরের ছেলে জিহাদ জামানের কাছ থেকে ল্যাপটপ ছিনতাই এর চেষ্টা করে এবং ল্যাপটপটি আছাড় মেরে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয় এবং জিহাদ জামানকে মারধর করে।
এরপর জিহাদের বাবা আক্তারুজ্জামান নাসির বাদী হয়ে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী ও অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় আগের শুনানিগুলোতে নয়ন বন্ডের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আনিসুর রহমান মিলন ও রিফাত ফরাজীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোতালেব মিয়া। তবে এই শুনানিতে এদের কেউ আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রীর সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারী সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে লড়াই করেও তাদের থামাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২জনের বিরুদ্ধে ২৭ জুন হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাত শরীফের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, পুলিশ এ পর্যন্ত ৮ জনকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।