নিউজ ডেস্কঃ
ভোলা নিউজ-০৮.১১.১৮
নির্বাচন করতে পারবেনা তৃণমুল বিএনপির নাজমুল হুদা। জেলেও যেতে হতে পারে হুদাকে। এমনটাই বললেন দেশের আইনবিদরা। ঘুষ গ্রহণের মামলায় দণ্ডিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তার সাজা ও অন্যান্য সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি ও বিশেষজ্ঞরা সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিচারিক আদালতে তার আত্মসমর্পণের কোনো বিকল্প নেই। এরপর তাকে রায় স্থগিতের জন্য আবেদন করতে হবে, উচ্চ আদালত রায় স্থগিত করলে তবেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আজ যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়, সেক্ষেত্রে এত অল্প সময়ের মধ্যেই এত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট নাজমুল হুদাকে ৭ বছর ও তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দেন। পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে নাজমুল হুদাকে চার বছর কারাদণ্ড ও সিগমা হুদাকে তার কারাভোগ কালকে সাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আদালত তাকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নাজমুল হুদা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিট করেন। রিটটি গত বছরের ১০ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এরপর তিনি আত্মসমর্পণ ছাড়াই আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এ বছরের ৭ জানুয়ারি সেই আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে এ মামলায় নিু আদালতে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতেই হচ্ছে। তবে রায় ঘোষণার প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি।
আর এ সুযোগ নিয়ে তিনি এখনও রাজনীতিতে সরব রয়েছেন। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রায় ঘোষণার ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু তা সব ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, রায় ঘোষণার পর কোনো রায় যদি দীর্ঘদিন প্রকাশ না পায় তাহলে এর ফল ও কার্যকারিতা আসে না।
শফিক আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেয়া সাজা এখনও বহাল আছে। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি জাতীয় নির্বাচনে অযোগ্য। তাই আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ আমি দেখছি না।
জানতে চাইলে দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে বলেন, রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌঁছার ৪৫ দিনের মধ্যে দণ্ডিত নাজমুল হুদাকে নিু আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও আমরা পাইনি। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে নাজমুল হুদার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ সাংবিধানিক বাধা হিসেবে কাজ করবে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দু’বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র পরিচালক ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখন নির্বাচনে অযোগ্য।
দণ্ডভোগ করার পাঁচ বছর পর তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের পর হয়ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে। ওই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিু আদালতের রায়ই বহাল থাকবে। ফলে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার মোবাইল ফোনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দুই দফা কল দেয়া হয়। তবে যুগান্তর প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে তিনি কোনো কথা বলতে অপারগতা জানান।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনটি মামলা হয়। একটি জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে, দ্বিতীয়টি এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে ৬ লাখ টাকা অবৈধভাবে নেয়ার অভিযোগে; আর তৃতীয়টি আকতার হোসেন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর জাহির হোসেনের কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে। প্রথম মামলাটিতে নাজমুল হুদাকে ১২ বছর সাজা দেন নিু আদালত। আপিলে হাইকোর্ট প্রথম মামলাটি খারিজ করে তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেন। দ্বিতীয় মামলাটির কার্যক্রম আদালতের আদেশে বন্ধ আছে।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিভিন্ন মেয়াদে খাদ্য, তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার আদেশের পরও বিএনপির পরিচয়েই রাজনীতিতে থাকার চেষ্টা করেন। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ), বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) তার নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন। সম্প্রতি এ দলটিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।