বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইট থেকে ঋণখেলাপি নায়ক ফারুকের অসত্য হলফনামা গায়েব। স্ব বিরোধী হলফ নামা, মিথ্যা তথ্য ও ঋণখেলাপি হওয়া স্বসত্বেও ‘বৈধ প্রার্থী’ হিসাবে নির্বাচনী মাঠে টিকে আছেন ঢাকা-১৭ আসনের মহাজোট প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করা হলফনামায় তার একক ঋণ হিসাবে সোনালী ব্যাংকের ৩৬ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু তারপরও রহস্যজনকভাবে তার মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে। অবশ্য এর জন্য প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইকালে নায়ক ফারুককে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে, তার প্রার্থিতা কিছু সময়ের জন্য ঝুলে ছিল।
নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে ব্যক্তিগত হলফনামায় পরস্পর বিরোধী তথ্য দিয়েছেন চিত্রনায়ক ফারুক। ৩৬০০,০০,০০০ টাকা ঋণ (ধরন একক) থাকার কথা স্বীকার করলেও তিনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করেননি। এ সংক্রান্ত কলামে তিনি ‘প্রযোজ্য নয়’ বলে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু পাশের কলাম বা ঘরে গৃহীত ঋণ পুনঃতফসিল না হওয়ার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।পুনঃতফসিল করা হইয়া থাকিলে উহার সর্বশেষ তারিখ’ কলামে তিনি লিখেছেন- ‘২৭-০৬-২০১৩ হইতে ৩১-০৩-২০১৪ বহুবার আবেদন করেও ব্যাংক কতৃক আবেদন গৃহীত হয়নি কেন জানতে পারলাম না।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক কেন তার আবেদন গ্রহণ করলো না? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নায়ক ফারুক সোনালী ব্যাংক তথা গোটা ব্যাংকিং সিস্টেমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র মতে, ফারুক ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের কর্ণধার আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ২০০১ সালে বস্ত্র মিল স্থাপনের জন্য সোনালী ব্যাংক থেকে ওই ঋণ নিয়েছিলেন। মিলটি ২০০৯ সালে উৎপাদনে গেলেও ব্যাংকে দেনা বাড়তে থাকে।
এ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলা হলে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ফারুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হন। তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের মধ্যস্থতা চেয়ে ঋণের দায় মুক্তির জন্য একাধিক প্রস্তাবও করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল প্রকৃত বকেয়ার যথাযথ হিসাব করা, সুদ মওকুফ এবং কয়েকটি কিস্তিতে দেনা পরিশোধের সুযোগ দেয়া। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। ফলে তার নাম ওঠে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি লিস্ট-এ। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর ওই তালিকায় থাকা নাম স্থগিত করতে তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রেখে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন বলে জানা গেছে। ফারুকের হলফনামা আগেই ভোলা নিউজ সংগ্রহ করে রেখে ছিলো। কিন্তু এখন এটি নির্ববাচন কমিশনে তার তিনপাতার হলফনামা বিদ্যমান রয়েছে। কমিশনের ওয়েব সাইটে ঢাকা-১৭ আসনসহ সারা দেশের প্রায় সব প্রার্থীর (মানোনয়ন দাখিল করা ব্যক্তিদের) ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত হলফনামা দৃশ্যমান থাকলেও নায়ক ফারুকের হলফনামা ইসির ওয়েবসাইট থেকে গায়েব হওয়ায় এই অসত্য তথ্যের হলফনামা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের কমিশনের দায়িত্বশীল কেউই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।