সম্পাদকীয়
নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশ ছুঁতে চলেছে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে সবজির দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায়। অকালবন্যা, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলে সবজির খেত নষ্ট হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে স্পুটনিক গতিতে। চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুতেই থামছে না। হঠাৎ করেই ডিমের দাম লাগামছাড়া। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা। মাছের গায়ে হাত দেওয়া দায়। সরকারি হিসাবে ইলিশ উৎপাদন শনৈ শনৈ বাড়ার কথা বলা হলেও এবার তা সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ হতে চলেছে আকাশছোঁয়া দামের কারণে। খুব স্পষ্টভাবে বলা যায়, জুলাই বিপ্লবে ছাত্রসমাজের সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষ একাত্ম হয়েছিল যেসব কারণে তার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি ছিল প্রধান। ৫ আগস্টের পর প্রতিটি পণ্যের দাম কমায় সাধারণ মানুষ এটিকে জুলাই বিপ্লবের আশীর্বাদ বলেই ভেবেছিল। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পতিত স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের সহযোগীরা প্রশাসনের সর্বস্তরে বহাল তবিয়তে আছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। তাদের সঙ্গে বাজার সিন্ডিকেটের যোগসাজশ থাকায় দ্রব্যমূল্য কমার ধারা এখন গল্পকাহিনির ভূতের মতো উল্টোপথে হাঁটছে। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। দেশে ডিমের সংকট থাকলে কিংবা চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হলে দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু ভারত থেকে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কিছুটা কমার পেছনে সিন্ডিকেটের কালো হাতের সম্পর্ক যে জড়িত তা স্পষ্ট। চিনি, আলু, পিঁয়াজের আমদানি শুল্ক কমানোর পরও দাম কমেনি। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা না থাকা যে কোনো সরকারের জনপ্রিয়তায় ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রিয়তাই তাদের প্রধান শক্তি এবং তা বজায় রাখতে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কড়া হতে হবে। পরিবহন চাঁদাবাজি যাতে নতুন পরিচয়ে ফিরে না আসে সেজন্য বাড়াতে হবে নজরদারি। বাজার মনিটরিংয়ে সক্রিয় হতে হবে সংস্কার প্রক্রিয়া জিইয়ে রাখার স্বার্থেই।