ইব্রাহিম আকতার আকাশ/ টিপু সুলতান : ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার ১নং বড় মলংচড়া ইউনিয়নের চর রাইয়ান এ চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই চৌধুরীর লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে তজুমদ্দিন থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে চর রাইয়ানের কলোনি বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আহতদেরকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন ও বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বড় মলংচড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি মো. জাকির মাল, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন ও মৎস্য লীগের সভাপতি তোফায়েল মাঝিসহ আহত ইয়াছিন বেগমের অভিযোগ, চর রাইয়ানের একাংশ দখল নিয়ে বড় মলংচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই চৌধুরীর সঙ্গে বিগত কয়েকবছর ধরে চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুলের দ্বন্দ্ব চলছে। আব্দুল হাই চৌধুরীর নেতৃত্বে তার লোকজন ওই চরের একাংশ জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করছে। এতে বাধা দিলে আওয়ামী লীগের ওই নেতার নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহাদুর ভূঁইয়া, ফরিদ হোসেন, মো. হোসেন, কামাল হোসেন, হাবিবউল্লাহ ও কুট্টি জাকিরসহ ১০ থেকে ১৫ জন নুরনবী সিকদার বাবুল চেয়ারম্যানের লোকজনের উপর প্রায়ই অতর্কিত হামলা চালায়।
সবশেষ ১৯ এপ্রিল দুপুরেও চরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল ও আব্দুল হাই চৌধুরীর লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আব্দুল হাই গ্রুপের মো. হোসেন, ফরিদ ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর মাঝি, বাহাদুর ভূঁইয়া ও দ্বীপু এবং চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল গ্রুপের ইয়াসমিন, কুলসুম, লিপি ও মোহাম্মদ আলী আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন ও বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুলের লোকজনের অভিযোগ,তজুমদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন দুলাল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দীন বাবুলের ছত্র ছায়ায় আব্দুল হাই চৌধুরী তার লোকজন দিয়ে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়।
চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল জানান, চরে যাদের জায়গাজমি নেই। তারা চরে গিয়ে আব্দুল হাই চৌধুরীর নেতৃত্বে চরের একাংশ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এতে বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও চর থেকে আব্দুল হাই চৌধুরীর লোকজন গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। দিনদিন চরের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে এ ঘটনার পাল্টা অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই চৌধুরীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুল দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে চর থেকে প্রকৃত চরবাসীদেরকে সরিয়ে দিয়ে একতরফা চর দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। আর এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তার পালিত ক্যাডার জাকির মাল, আকতার হোসেন, তোফায়েল মাঝি ও ইউছুফ ফকিরসহ বেশ কয়েকজন আমার লোকের উপর যুগোপযোগী হামলা করে।
তিনি বলেন, চরে যাদের জায়গাজমি রয়েছে। তাদেরকে চর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদেরকে চরে উঠতে দিচ্ছে না চেয়ারম্যানের লোকজন। চেয়ারম্যান সন্ত্রাসীদের নিয়ে চর রাইয়ান দখলে নিয়েছে। চরে যাদের জমি রয়েছে, তাদেরকে একাধিকবার জমির দলিলপত্র নিয়ে বসার কথা বললেও চেয়ারম্যান তা মানছে না। দফায় দফায় আমার লোকজনের উপর হামলা করা হচ্ছে।
১৯ এপ্রিলের ঘটনাটিও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার লোকজন ঘটিয়েছে দাবি করে আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, চর দখল নিয়ে মাঝেমধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে যেকোনো সময় খুনের ঘটনাও ঘটতে পারে। চরবাসী সবসময় আতঙ্কে থাকে। চেয়ারম্যান পুরো চর দখলে নিয়ে রাজত্ব করছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হক বলেন, চর নিয়ে আব্দুল হাই চৌধুরী ও চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার বাবুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ১৯ এপ্রিল দুপুরে চরে সংঘর্ষ হয়েছে মর্মে পুলিশ খবর পেয়েছে। পরে থানা থেকে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছে। তবে এ ঘটনায় কেউই অভিযোগ কিংবা মামলা করেনি। আহতরা তজুমদ্দিন ও বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান