তাইফুর সরোয়ারঃ-
করনা পরিস্থিতিতে পৃথিবী সম্ভবত ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রধানই এই পরিস্থিতিকে বিশ্বযুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। এই যুদ্ধ অদৃশ্য শত্রু করনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
মহামারী আকার ধারন করা এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা আজ সোমবার পর্যন্ত ১৮,৫৩,৩৫৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১,১৪,২৫৩ জন । বাংলাদেশও ক্রমাগত বাড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।
এই যুদ্ধে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে ফ্রন্ট লাইন ফাইটার হিসেবে মনে করা হচ্ছে ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের অসংখ্য ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরলস প্রচেষ্টা সত্যি আমাদের মুগ্ধ করছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে পুলিশ, সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনীসহ প্রশাসনের অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের তাদের প্রতি ঋণী করছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক, জন প্রতিনিধিদের সাধারণ মানুষের জন্য করা দিন রাত অবিরাম পরিশ্রম দেখলে মন হয় – সত্যই মানুষ মানুষের জন্য। নিজের সংক্রমনের ভয়কে তুচ্ছ করে এরা কাজ করছে দেশের মানষকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে, কর্মহীন দিন মজুরের বাড়িতে ত্রাণের প্যাকেট পৌছে দিতে, অভুক্ত গরিব পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে, অসচেতন পথচারীকে সচেতন করতে।
এত এত মানবিকতার মাঝে কিছু অমানবিক ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। তখন মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে নিজেদের কাছেই লজ্জা লাগে। ইদানিং স্যোসাল মিডিয়া, পত্র পত্রিকা এবং টেলিভিশন সংবাদে প্রায় প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায় ত্রানের চাল চুরির ঘটনা। এই চরম পরিস্থিতির মধ্যেও জন বিচ্ছিন্ন কিছু জন প্রতিনিধি কর্তৃক অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রানের চাল চুরির ঘটনা সত্যি লজ্জাজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। অনেক যায়গা থেকে খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতেও ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সারা দেশের জনগন যেখানে অঘোষিত লক ডউনে আছে, যেখানে তাদের এক পয়সাও আয় নেই, সেখানে এই মানুষ রূপী অমানুষগুলো দুস্থ জনদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল লুটে খাচ্ছে। সারা পৃথিবীর মানুষ যেখানে করনায় ভয়ে নিজেকে শুধরাচ্ছে, ভুল থেকে সঠিক পথে আসছে, সেখানে কিছু চোরের দল করনা পরিস্থিতিকে পূঁজি করে ত্রান চুরির মাধ্যমে নিজেদের আরো সম্পদশালী করছে। কিন্তু এদেরও তো বুঝতে হবে যে -চুরি করা সম্পদ কি এরা ভোগ করে যেতে পারবে? কারন এরা কিংবা এদের পরিবারও কিন্তু করনা ঝুকির উর্ধ্বে নয়। আশা করি অচিরেই এদের শুভ বুদ্ধি হবে।
এখন সময় আমাদের মানবিকতার, মনুষত্বের সর্বোচ্চ পরিচয় দেয়ার। করনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে বেসরকারি খাতকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। সমাজের বিত্তবানদের দাঁড়াতে হবে বিত্তহীনদের পাশে। আর কিছু না করতে পারি – নিজেরা ঘরে অবস্থান করে আমাদের ভালোর জন্য যারা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তাদের কাজের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা করতে পারি।
আশা করি অচিরেই অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে উদয় হবে নতুন সূর্যের। আমরা ফিরে পাব করনার ভয়মুক্ত নতুন পৃথিবী। জয় হবে মানবতার, ইনশাআল্লাহ।