ইব্রাহিম আকতার আকাশ,: ভোলায় পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে স্কুল থেকে এক প্রধান শিক্ষককে বিতাড়িত করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কি কারনে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
তবে লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৭নং সাহিদা রহমান রেবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। কেউ কেউ ফুটেজ দিয়ে টিকটক করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকবছর ধরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন খুকু রাণী দে। খুকু রাণীর সঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য রয়েছে। তাঁরা খুকু রাণীকে এই স্কুল থেকে অন্যত্রে বদলি করতে চেয়েও ব্যর্থ হন। কোনো উপায়ে তাকে বদলি করতে না পেরে নানান পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনায় গতকাল খুকু রাণী দে বিদ্যালয়ে গেলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অন্যান্য শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দিয়ে জুতা ও ঝাড়ু মিছিল করান। শিশু শিক্ষার্থী, কয়েকজন অভিভাবক, রিকশাচালক ও দোকানদাররা হাতে জুতা ও ঝাড়ু নিয়ে খুকু রাণীকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেন।
রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁর ছেলে মো. নোমান ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে খুকু রাণী রিকশাযোগে ঘটনাস্থল থেকে উপজেলায় চলে যান।
মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তারমধ্যে ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিশু শিক্ষার্থীরা হাতে জুতা ও ঝাড়ু নিয়ে খুকু রাণীর বিরুদ্ধে মিছিল করতে। তাঁরা খুকু রাণীকে এই বিদ্যালয়ে আর দেখতে চান না বলেও মিছিলে স্লোগান দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত এক শিক্ষিকার স্বামী ভোলা নিউজকে বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। একজন প্রধান শিক্ষককে এভাবে লাঞ্ছিত করা মোটেও ঠিক হয়নি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে খুকু রাণীর মনোমালিন্য রয়েছে। যাঁর জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের সামনের এক দোকানদার ভোলা নিউজকে বলেন, একজন নারী শিক্ষক এর সঙ্গে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ ঠিক হয়নি। ঘটনাটি অমানবিক। যে শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর, আজ সেই শিক্ষক প্রকাশ্যে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। ঘটনাটি দেখে আমি মর্মাহত।
স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নোমান জানান, খুকু রাণী স্কুলে যোগদান করার পর থেকেই নিজের ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠান চালাত। যা ম্যানেজিং কমিটির পছন্দ হয়নি। খুকু রাণীর সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অন্যান্য শিক্ষকদের মনোমালিন্য রয়েছে। তবে প্রকাশ্যে তাকে ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে বিতাড়িত করেছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন। তবে এ ঘটনায় তিনি জড়িত নন। বরং খুকু রাণী তাকে মামলার ভয় দেখিয়েছিলেন।
রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান জানান, ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাঁর ছেলে। শিশু শিক্ষার্থীরা তাকে জুতা ও ঝাড়ু নিয়ে বিতাড়িত করা দেখে তিনি খুকু রাণীকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি জড়িত নন এবং এ বিষয়ে তিনি আর কিছুই জানেন না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আজ বুধবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছে। খুকু রাণী এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি হতে চেয়ে আজ সকালে একটি আবেদন করেছেন। তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ঘটনাটি তদন্ত করতে একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আরিফুজ্জামান ঢাকা ভোলা নিউজকে জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনাটি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান