জান্নাত একটি সুপরিচিত শব্দ। শব্দটির অর্থ উদ্যান, সুখময় স্থান ইত্যাদি। পরিভাষায় পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবনের অবসানের পর মুমিনের অনন্ত সুখময় চিরস্থায়ী জীবনের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসজ্জিত প্রস্তুত করে রাখা আবাসকে জান্নাত বলা হয়। যে কেউ ইচ্ছা করলেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
এ জন্য মানতে হবে কোরআন-সুন্নাহর বিধান। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে প্রবহমান থাকবে নহর। আর যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাকে দেবেন যন্ত্রণাময় শাস্তি।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১৭)
জান্নাত লাভের ছোট-বড় আমল অনেক আছে।
নির্বাচিত আট আমল এখানে উল্লেখ করা হলো :
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইবাদত। কোরআন হাদিসে নামাজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে। নিয়মিত নামাজ আদায়ের পুরস্কার জান্নাত। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।
যে ব্যক্তি এই নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলাবশত তাতে কোনো ত্রুটি করবে না, তার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার চুক্তি হয়েছে যে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪০১)
২. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
আয়াতুল কুরসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে কোরআনের আয়াতগুলোর সর্দার বলা হয়েছে। ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যাওয়ার পথে তার কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে যাবে। (নাসায়ী, হাদিস : ৯৮৪৮; তাবারানি, হাদিস : ৭৫৩২ )
৩. সায়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ
ক্ষমা প্রার্থনার অনেক বাক্য আছে। তার মধ্যে সায়্যিদুল ইস্তেগফার শ্রেষ্ঠ। সকাল-সন্ধ্যা পাঠের ফজিলত জান্নাত। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলা সায়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা গেলে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলা পাঠ করবে, সকাল হওয়ার আগেই মারা গেলে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)
৪. কালেমা শাহাদাত পাঠ করা
অজু শেষে আকাশ বা ওপরের দিকে তাকিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠকারীর জন্য জান্নাত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কামিল বা পূর্ণরূপ অজু করে পাঠ করবে—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৬)
৫. আজানের জবাব দেওয়া
আজান শুনে জবাব দেওয়া সুন্নত। এর প্রতিদান জান্নাত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজানের জবাব যদি কেউ মন থেকে (গুরুত্বের সঙ্গে) বলে, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৫; আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৭)
৬. বিশেষ তিনটি আমল
কারো সঙ্গে কথোপকথনের আগে সালাম বিনিময় করা, মানুষকে খাওয়ানো এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া—সহজ এই তিনটি আমলের বিনিময়ে জান্নাত লাভ হবে। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সর্বপ্রথম সাক্ষাতের সময় আমি তাঁকে কথা বলতে শুনেছি, হে লোক সকল ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও। খাবার খাওয়াও। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন (অর্থাৎ শেষ রাতে) নামাজ পড়ো। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৪)
৭. দুই জিনিসের হেফাজত করা
মুখ ও যৌবন হেফাজত করার প্রতিদান জান্নাত। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজতের নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেব। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)
৮. আপনজনের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ
প্রিয়জনদের ইন্তেকালে ধৈর্য ধারণ করার প্রতিদান জান্নাত। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দার অতি প্রিয় ব্যক্তিকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিই, অতঃপর সে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার প্রতিদান হলো জান্নাত। (বুখারি, হাদিস : ৬৪২৪)
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান