জনবহুল দেশ অথচ অবহেলিত মাঠকর্মীরা,বেতন গ্রেড ১৭ নেই পদোন্নতিও

মাহিয়ান হিমেল#,,
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ে (fWA ও Fpi) কর্মচারীদের পদোন্নতি হচ্ছে না, বেতন গ্রেড ও অতি সাম্মান্য। মাত্র ১৭ গ্রেড বেতন পাচ্ছেন পরিবার কল্যান সহকারীগন(Fwa) অন্যদিকে ১৬ গ্রেড বেতন পাচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকগন।

একই পদে থেকে তাদের চাকরিজীবনের ইতি টানতে হচ্ছে। নিয়োগবিধি না থাকার অজুহাতে তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও তারা চতুর্থ শ্রেণীর বেতন পাচ্ছেন!

এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নজিরবিহীন দাবি করে কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। নিয়োগবিধি ও পদোন্নতি হালনাগাদ করার কথা থাকলেও নিয়োগবিধি নেই। অথচ নতুন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নজিরবিহীন দাবি করে কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে এ হুশিয়ারি দেয়া হয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন, ১০ গ্রেড ও ১১তম গ্রেড প্রদান এবং দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা না হলে ১ জুলাই থেকে কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় এ অধিদফতরের এফপিআই ও এফডব্লিউএসহ প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী আছেন।

এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪৫০, সুনামগঞ্জে ৩৮০, মৌলভীবাজারে ২৭০ এবং হবিগঞ্জে ৪৭৮ জন কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের নিয়োগবিধি হালনাগাদ করা হচ্ছে না। কবে এ নিয়োগবিধি হালনাগাদ করা হবে কর্মচারীরা তাও জানেন না। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আবেদন ও স্মারকলিপি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারীরা বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের অধীন মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্য সব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও তাদের নিয়োগবিধির ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাল ফিতায় আটকে আছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কারণেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এ কাজের মূল কারিগর এফপিআই ও এফডব্লিউওরা চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। পরিবার কল্যাণ সহকারীদের শূন্যপদে এনজিও কর্মীদের নিয়োগ ও পরিদর্শক পদ বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এতে কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও তাদের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর পরিচালক (প্রশাসন) এক চিঠির মাধ্যমে এফডব্লিউএদের ১৭তম গ্রেডে তালিকাভুক্তিকরণের উদ্যোগ নেয়ায় মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ১৬তম গ্রেড, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) ১৫তম গ্রেড, স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এইচআই) ১৪তম গ্রেড, কমিউনিটি হেলথ প্রোপাইটর (সিএইচসিপি) ১৪তম গ্রেড, কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত ব্লক সুপারভাইজাররা পদোন্নতি পেয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (১১তম) হয়েছেন। অথচ পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) ১৭তম গ্রেড এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) ১৬তম গ্রেডে অবস্থান করছেন। লক্ষণীয় বিষয় হল- এফডব্লিউএরা সরকারি ঘোষণামতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হলেও বেতন পাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণীর স্কেলে ১৭তম গ্রেডে। কর্মচারীদের দাবি, এফপিআইদের ১০তম গ্রেড এবং এফডব্লিউএদের ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া হোক। এ পদোন্নতির ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। এ ব্যাপারে প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় কমিটি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানা গেছে।

পরিবার পরিকল্পনা সিলেট জেলা মাঠ কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে যোগদান করলেও বেতন পাচ্ছি চতুর্থ শ্রেণীর। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মাঠ কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লিয়াকত আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। দাবি আদায়ে আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত। সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নিয়োগবিধি হালনাগাদ করা হচ্ছে না। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারী পদের প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারীর পদোন্নতি, বেতন গ্রেড ও সিলেকশন গ্রেড আটকে আছে। নিয়োগবিধির ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, এমন বৈষম্য অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে নেই।

SHARE