চরফ্যাশনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভবন নির্মানের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ভোলানিউজ.কম,

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ মনকি পৌরসভা থেকে ভবন নির্মানের জন্য কোনো নকশা ও অনুমোদন নেয়নি তিনি।

বহুতল ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে চরফ্যাশন পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র চরফ্যাশন বাজারে। ওই জমি নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী মো. দেলোয়ার হোসেনসহ ২৮ জন জমির প্রকৃত মালিক মহব্বত আলী বেপারীর ওয়ারিশ (নাতি-নাতনি) আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আলোকে আদালত জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ভবনটি নির্মাণের জন্য আবেদন করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নান্নু। কিন্তু ভবনের নকশার এখনও অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন ছাড়াই কেনো ভবন নির্মাণ করছেন তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলার এজাহার, জমির দলিল ও মৌখিক অভিযোগে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় মৌজার (চরফ্যাশন বাজার) ৫৫১ নম্বর খতিয়ানের ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি ১৯৪৮-৫৯ সালে ভুমি অফিস উপজেলার উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের বাসিন্দা মোহাব্বত আলী বেপারীকে বন্দোবস্ত দেয়। জমিটি চরফ্যাশন বাজারের চান্দিনা ভিটা। বর্তমান মূল্য কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। ওই জমিতে ঘর তুলে মোহাব্বত আলী বেপারী চুক্তিপত্র ছাড়াই মতিউর রহমান দফাদারকে ভাড়া দেন। হঠাৎ ১৯৫৪ সালে মোহাব্বাত আলী বেপারী মারা যান। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজাকার হিসাবে চিহ্নিত মতিউর রহমান দফাদার মারা গেলে দোকান পরিচালনা করেন তার ছেলে আবু তাহের। আবু তাহেরের কাছ থেকে দোকানের মালিকানা পরিবর্তন হয়ে মালিক হয় বর্তমান চরফ্যাশন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম। এর পর থেকে মোহাব্বত আলী বেপারীর ওয়ারিশরা দোকানের যায়গা দাবি করলে তাদেরকে কিছু দিন ভাড়া দিয়ে আসলেও এক সময় ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলমান ছিল। সম্প্রতি ওই জমিতে নুরুল ইসলাম আসপাশের দোকান মালিকদের নিয়ে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ ঘটনায় বাদিপক্ষ চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নির্মাণ কাজের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করে। আদালত গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ওই জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাদিপক্ষ আরও বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ চরফ্যাশন থানা পুলিশকে দেখালে পুলিশ গত বৃহষ্পতিবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু পরের দিন নুরুল ইসলাম নান্নু ক্ষমতার প্রভাবে আবারও কাজ চালু করেন।
গত রোববার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নুরুল ইসলাম পক্ষ শ্রমিক নিয়ে প্রকাশ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাজারের মেইন সড়ক দখল করে মালামাল ও শ্রমিক থাকার ঘর নির্মাণ করেছেন এবং সড়কের ওপর ইট-বালু ও রড রেখেছেন। এতে লোকজনের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নান্নু মিয়া বলেন, গত ৫০ বছর ধরে এ জমি আমার দখলে। হঠাৎ করে আমাকে অযথা ভোগান্তির মধ্যে ফেলার জন্য মো. ফারুক বেপারী আদালতে মামলা করেছে। রোববার আদালতে শুনানী হয়েছে। আদালত স্থিতাদেশ দিয়েছেন কিনা জানিনা। আমি ১৯৭৫সাল থেকে এ জমির দখলে আছি।
তিনি আরও বলেন, জমিটি আমি ১০-১২ দিন আগে কাজ শুরু করেছি। জমির মালিক মহব্বত আলী বেপারী জনৈক আবু তাহের পক্ষের নিকট ১৯৫৫ সালে বিক্রি করেছেন। আমি আবু তাহেরের ছেলে মো. জাকির হোসেন ও স্ত্রী বিবি তহুরা বেগমের নিকট সাড়ে ৮৪ সহ¯্রাংশ জমি কিনেছি। এ দাগে আরও ৭২সহ¯্রাংশ জমি বাকী আছে। সে জমি যাদের দখলে আছে, তাঁদের নামে কোনো মামলা হয়নি বা তাঁদের বিবাদী করেনি। এসময় তিনি মোহব্বত আলী বেপারী আবু তাহেরের নিকট এ জমি বিক্রি করছে বলে একটি দলিলের ডুপ্লিকেট কপি দেখায়। কিন্তু কিনেছেন এরকম কোনো দলিল দেখাতে পারেননি।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিনি। এ ভবনের কাজ শুরু হয়েছে গত ২১ফেব্রুয়ারী। এ জমিতে আমরা এক সঙ্গে ৫ জন ভবন তুলতেছি। তবে আমি ২৮ ফেব্রুয়ারী আদালতের একটি কাগজ পেয়েছি।

(আরজে, ৪মার্চ-২০১৯ইং)

SHARE