ডেস্ক: অনলাইন,ভোলানিউজ.কম,
চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালসহ বেসরকারি চিকিৎসালয়ে র্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে রোগীদের জিম্মি করার পাল্টা কৌশল নিয়েছে হাসপাতাল মালিকরা। তারা সব হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
রবিবার নগরীর পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে র্যাবের অভিযান চলাকালে মহানগর, জেলা, উপজেলায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস ছাড়াও হাসপাতাল-ক্লিনিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে নগরীর চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএর ভবনে এক জরুরি সভা থেকে এই ঘোষণা দেয় বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক সমিতি।
সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করার কারণ হিসেবে সাংবাদিক কর্তৃক বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের উপর ‘হামলার’ কথা জানানো হয়।
সভা শেষে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গত ২৯ জুন দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যায়। গলায় ব্যথা নিয়ে আগের দিন সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
ভুল চিকিৎসায় মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে-এমন অভিযোগ উঠার পর তদন্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করে দেয়া কমিটি। আর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে তাদের প্রতিবেদনে বলে, চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির কারণে মেয়েটি মারা গেছে। তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
এরপর রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতাল, ওআর নিজাম রোডের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল আর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর হাসাপাতালে একযোগে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এসব হাসপাতালগুলোর নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে এই অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে চিকিৎসক দেওয়ান মাহমুদ মেহেদি হাসানও উপস্থিত ছিলেন। আর এই অভিযান চলার সময়ই বৈঠকে বসে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা।
চিকিৎসক লিয়াকত আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখতে চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধও জানান এই চিকিৎসক।
যেসব রোগী এরইমধ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি আছেন মানবিক কারণে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে বলেও জানান লিয়াকত।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মুজিবুল হক খান ঢাকাটাইমসকে জানান, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক সমিতির এই সিদ্ধান্তে বিএমএ একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
এর আগেও নানা সময় চিকিৎসকদের আইন অমান্য করে সরকারি হাসপাতাল রেখে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দেয়া, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে গ্রেপ্তার বা হাসপাতালে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় চিকিৎসকরা হাসপাতাল বন্ধ রেখে পাল্টা চাপ দিয়েছে।
জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এভাবে ধর্মঘট করতে পারে কি না, এই বিতর্কের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এভাবে রোগীদেরকে জিম্মি করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থারও ঘোষণা দিয়েছিলেন একাধিকবার।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৮জুলাই-২০১৮ই)