খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন সুচিকিৎসার দাবি ১০১ চিকিৎসকের

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন হয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ১০১ জন চিকিৎসক। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় নিম্ন আদালতে সাজা দিয়ে নির্জন কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরে ৩১শে অক্টোবর নিম্ন আদালতের ৭ বছরের সাজা হাইকোর্ট বাড়িয়ে দেয় ১০ বছরে। এর মাত্র একদিন আগে নিম্ন আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট মামলা নামে আরো একটি মামলায় ৭ বছরের সাজা প্রদান করে। এ ছাড়াও ২০১৪ সালের নির্বাচন ও তার আগে-পরের রাজনৈতিক আন্দোলন কেন্দ্রীক তার বিরুদ্ধে আরও কয়েক ডজন মামলা নানাস্তরে প্রক্রিয়াধীন আছে। বিগত দশকে দেশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক কেলেঙ্কারী ও অর্থ লোপাটে সরকারের সকল কর্তৃপক্ষের কার্যত নীরব থাকার প্রেক্ষিতে দেশের জনগণও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষের এই দাবিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করছে।

বিবৃতিতে চিকিৎসকরা বলেন, এই বর্ষিয়ান ও অসুস্থ রাজনীতিবিদের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও স্বৈরাচারের কষাঘাতে বিক্ষত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্বৈরতন্ত্রকে রুখে দাঁড়াবার গণ-আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে।

৯১ সালে রাজনীতিতে ও সংসদে নবাগত হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে স্বৈরতন্ত্রের ছত্রছায়ায় মহীরূহ হয়ে বেড়ে ওঠা সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলার চরম বিশৃঙ্খলা কঠোর হাতে দমন করে রাষ্ট্র জীবনের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার অবদান জাতিকে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার এক সঙ্কুল অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান স্থপতি, রূপকার ও চালক তিনিই।

তার পরিবারের অন্যান্যদের মত তাকেও শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়াই প্রকৃত উদ্দেশ্য সে বিষয়ে জনমনের সন্দেহ প্রকট হচ্ছে বলে খবর আসছে। ধারণা করা যেতে পারে যে, এই পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চিকিৎসকরা বলেন, পিচ্ছিল স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যে কোন সময়ে পড়ে গিয়ে তার হাঁটু, উরুসন্ধি, হাত ও মেরুদন্ডের হাড় ভাঙ্গাসহ মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাতজনিত পক্ষাঘাত রোগ ঘটার আশঙ্কা করা হয়েছিল। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষন্নতাসহ নানা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভবনা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তার আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকিও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনের বিষাক্ত পরিবেশে তার মারাত্মক ঔষধ-প্রতিরোধী জীবানু দ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠতে পারে। কারাগার বিশেষ করে পুরোনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনে স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই কারাগারের বসবাস অযোগ্যতা ছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসার কোনই সুযোগ-সুবিধা নেই। হেফাজতে সাম্প্রতিক বছরকালে সাড়ে ছয় শতাধিক মৃত্যুর খবর ইতিমধ্যে নানাবিধ শঙ্কা বাড়িয়েছে। ইতিপূর্বে খালেদা জিয়ার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি লন্ডনে চোখের অপারেশনও সম্পন্ন করেছেন। বয়স ও নানা জটিল রোগের কারণে তিনি কোন সাধারণ রোগী নন। প্রকৃত ও যথাযথ সেবার অভাবে, ক্রমান্বয়ে তিনি ঘাঁড়, মেরুদন্ড ও নানাবিধ স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তার এই দীর্ঘকালীন রোগ অবস্থা কেবলমাত্র দীর্ঘকাল তার চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ও নিয়োজিত ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরই ভালোভাবে জানা আছে। নতুন কোন চিকিৎসক দলের পক্ষে তার সম্পূর্ণ অবস্থা এক নজরে ও এক নিমেষে অনুধাবন ও নির্ণয় করা একেবারেই অবাস্তব কল্পনা। সরকারের নানা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার যথাযথ ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করছে বলে দেশ ও বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে আসছেন।

এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও মানবিককর্মী হিসাবে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিয়ে তার রোগ লাঘবে মানবিক ভূমিকা পালনের জন্যে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দেশের একটি উন্নত সুযোগ সম্বলিত হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- অধ্যাপক ডা. বায়েছ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক ডা. মবিন খান, অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক ডা. এএসএমএ রায়হান, অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. খাদিজা বেগম, অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মঈনুল হাসান সাদিক, অধ্যাপক ডা. আজিজ রহিম, অধ্যাপক ডা. আশরাফ উদ্দিন, অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈনউদ্দিন, অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীরসহ মোট ১০১জন চিকিৎসক।

SHARE