বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নজিরবিহীন আন্দোলন। নানা প্রতিশ্রুতি চোখ খুলে দেয়া। কিন্তু কোনো কিছুতেই বদলাচ্ছে না পরিস্থিতি। প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণ। অঙ্কুরেই মরে যাচ্ছে একটি পরিবারের স্বপ্ন। গতকালও কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝরেছে দুই শিক্ষার্থীর প্রাণ হারালো। নিহতরা হলো- চান্দিনার কুটুম্বপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মাহমুদা আক্তার ইয়াসমিন (১৫) ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বিজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া সাহা (১৬)।
নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনেই ট্রাক্টর চাপায় নিহত হয় ইয়াসমিন আর লেগুনা থেকে পড়ে নিহত হয় রিয়া। এই ঘটনার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ট্রাক্টরচালক মনোয়ার হোসেন (১৮)কে আটক করে স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের সামনের কাঁচা সড়ক দিয়ে গ্যাস লাইন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচল করে। ২৬শে মার্চ উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে। সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আমি দাঁড়ানো ছিলাম আর ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের দিকে আসছিল। ১৭-১৮ বছরের এক ট্রাক্টরচালক মেয়েগুলোকে দেখে জোরে হর্ন চেপে ট্রাক্টরটি রাস্তায় এদিক-সেদিক ঘুরাচ্ছিল। এ সময় ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন পানিতে পড়ে যায় আরেকজন চাকায় পিষ্ট হয়।
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাশের মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে হাইওয়ে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের প্রহার করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ইয়াছিন (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। তার মাথায় পেছনে অংশ ফেটে গেলে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দাউকান্দি সার্কেল) মহিদুল ইসলাম জানান, আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য, স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। গাড়ি ও চালক আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, দুপুর সোয়া ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম জাকারিয়া।
এ সময় গ্যাস লাইন নির্মাণ কোম্পানি চিটাগং-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস লাইন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল যোবায়ের জানান, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আমরা নিহতের পরিবারকে ৬ লাখ টাকার চেক দিয়েছি। ভবিষ্যতে আমরা দক্ষ ও লাইসেন্স প্রাপ্ত চালক নিয়োগ দেব। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।