করোনা প্রতিরোধে চাই অটুট মনোবল

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আমাদের দ্বীপ জেলা ভোলাতে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একই পরিবারের দুই জনসহ মোট আক্রান্ত পাঁচ জন। তাই ভোলা সহ সারাদেশের মানুষের মনে একটা ভয় কাজ করছে। চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে সবাই।

কথায় আছে- বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। করোনার ভয়ে আজ আমরা ভীত, সন্ত্রস্ত। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমরা আক্রান্ত হচ্ছি মানসিক বন্দিত্বে। অতি ভয় বা আতঙ্কে আমরা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পরছি। তখন ছোট খাটো সমস্যা গুলোও হয়ে দাড়ায় পাহাড় সমান। সারাক্ষণ করোনা নিয়ে টিভিতে বিভিন্ন সংবাদ ও টক শো দেখে, সোসাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রে এই বিষয়ের বিভিন্ন খবর পড়ে আমাদের নিজেদের অজান্তেই মনের মধ্যে প্রচন্ড ভয়ের উদ্বেগ হয়। তখন সামান্য একটু গা গরম বা খুশখুশে কাশি হলে আমরা চিন্তায় পরে যাই- করোনা নয় তো!

করোনায় ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতার। ভয় সম্ভবনাকে সংকুচিত করে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং অন্যান্য রোগ আক্রমণের সম্ভবনাকে বাড়িয়ে দেয়। করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলতে হবে। এর সাথে সাথে অটুট রাখতে হবে মনোবল।

আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের সবকিছুর মধ্যে করোনাভাইরাসকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এই কোয়ারেন্টইন সময়টাতে আমাদের শুধুমাত্র এই মহামারিকে জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে ভিন্ন কিছুতে মনোনিবেশ করতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলোকে করে তুলতে হবে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। পরিবার এবং নিজেকে এত লম্বা সময় দেয়ার সু্যোগকে হেলায় হাতছাড়া করা যাবে না। এই রমজান মাসে রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি নফল ইবাদত করে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারি আমরা। এতে করে এক দিকে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে অশেষ সওয়াব পাওয়া যাবে, অন্য দিকে ইবাদতগুলো করতে পারায় নিজেরা মানসিক ভাবেও সন্তুষ্ট থাকব। এছাড়া ইউটিউব এ মজার রান্না, ইংরেজি চর্চা, গ্রাফিক্স বা ওয়েব ডিজাইনের মতো কোন বিষয়ে পারদর্শিতা অজর্ন করতে পারি। বুক শেল্ফ এ রাখা দেশি বিদেশি লেখকদের কালজয়ী উপন্যস, গল্প, প্রবন্ধের বইগুলো হয়ত সময়ের অভাবে পড়া হয়ে উঠে নি। কোয়ারেন্টাইনের অফুরন্ত সময় হতে পারে এই বইগুলো পড়ে শেষ করার মোক্ষম সময়। যারা মুভি দেখতে ভালোবাসি, তারা এই অবসরে দেখে নিতে পারি নিজেদের লিষ্টে থাকা পছন্দের মুভিগুলো যেগুলো এতো দিন দেখা হয়ে ওঠে নি সময়ের অভাবে। যারা লিখতে ভালোবাসি, এই লম্বা সময়ে লিখতে পারি দুয়েকটি গল্প, কবিতা কিংবা সম্পূর্ণ একটা উপন্যাস। দিনের একটা নির্দষ্ট সময়ে শরীরের সুস্থতার জন্য নিজের রুমেই ব্যায়াম এবং মনের সুস্থতার জন্য মেডিটেশন করতে পারি। এরকম আরও হাজারও কাজ আছে যেগুলো করে আমরা গৃহ বন্দীর নিরানন্দের সময়গুলোকে আনন্দময় করতে পারি।

করোনা ভয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করলে সমস্যার সমাধানতো হবেই না, বরং আমাদের মনোজগতে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। নিজে বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলেও হারানো যাবে না মনোবল। মহান আল্লাহ্ উপর ভরসা রেখে মনোবলকে সাথে নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চললে মুক্তি মিলবে করোনা থেকে, ইনশাআল্লাহ।

SHARE