তাইফুর সরোয়ারঃ-
জান্নাত আক্তার, বয়স ৩৫ বছর। তিন মাসের সন্তান সম্ভবা। এসেছেন ভোলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্ত্রী ও গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ভোলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সাইফুর রহমানকে দেখাতে। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে ডাঃ সাইফুর রহমান স্যার এর চেম্বার অনির্দষ্ট কালের জন্য বন্ধ। চেম্বার কবে খুলবে সে বিষয়ে স্যার তাদের কিছু জানান নি।
মিলি বেগম, সাত মাসের গর্ভবতী। প্রসবের সময় প্রায় নিকটবর্তী হওয়ায় এসেছেন এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ ফয়সালের কাছে নিয়মিত চেক আপ করাতে। ডায়াগনস্টিক থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে এই সপ্তাহে ডাঃ মোঃ ফয়সাল স্যারের চেম্বার বন্ধ, আগামী সপ্তাহে স্যারের রোগী দেখার সম্ভবনা আছে। এরপর তাকে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় আগামী সপ্তাহে তিনি যেন ফোন করে আসেন।
ভোলায় জান্নাত বেগম, মিলি আক্তারের মত শত শত গর্ভবতী মা করোনা পরিস্থিতির কারনে চিকিৎসা বঞ্চিত ভাবে দিন পার করছেন। অনেকে স্থানীয় ঔষধের দোকান থেকে তাদের সমস্যার কথা বলে ঔষধ কিনে খাচ্ছেন, অনেকে আবার পুরাতন ব্যবস্থাপত্র দেখে নিজেই করছেন নিজের ডাক্তারি। এতে করে সামান্য একটু ভুলের জন্য ঘটতে পারে মা ও অনাগত সন্তানের অনেক বড় দুর্ঘটনা।
গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত হবু মাকে থাকতে হয় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে। নিয়মিত চেক আপ এবং ফলো আপের মাধ্যমেই একজন মা জন্ম দেন একটি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক সন্তানের। করনা আতঙ্কে গাইনী ডাক্তাররা নিয়মিত চেম্বার করছেন না। দুই এক জন ডাক্তার চেম্বার করলে ও খুব সীমিত সংখ্যক রুগী দেখছেন। এছাড়া বৃহস্পতি ও শুক্রবারে যে সকল ডাক্তাররা ঢাকা বরিশাল থেকে ভোলাতে এসে রুগী দেখতেন তারাও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এবং করোনা আতঙ্কে ভোলাতে আসছেন না। আবার সরকারি হাসপাতালে মাঝে মাঝে স্বল্প পরিসরে চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও সরকারি হাসপাতালের সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে জন সাধারণের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। আর করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এতে করে দ্বীপ জেলা ভোলার শত শত গর্ভাবতী মা চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছেন।
গর্ভাবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে একজন হবু মায়ের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা অতীব জরুরী। সামান্য একটু অবহেলা মা ও অনাগত সন্তানের হতে পারে অপূরনীয় ক্ষতির কারণ। তাই দেশের এই সংকট কালীন মুহূর্তে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানের মাধ্যমে দ্বীপ জেলা ভোলার গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে এক যোগে কাজ করতে হবে।