মোঃ আশরাফুল আলম
সারা বিশ্বে এখন বড় আতঙ্কের নাম করোনা।সৃষ্টিকর্তার এ অদৃশ্য শক্তির কাছে পৃথিবীর সব শক্তি আজ পরাজিত। বর্তমানে এ পরস্হিতিতে দিন মজুর, গার্মেন্টস কর্মী, পরিবহন চালক, বেসরকারি খাতে কর্মরত মানুষদের মধ্যে একদিকে যেমন আতঙ্ক অন্যদিকে হাহাকার বিরাজ করছে।চলছে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ত্রান বিতরণ।
প্রশ্ন উঠেছে ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়ে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের নীতি৷এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ত্রাণ বিতরণের সময় ফটো সেশন। দেখা গেছে যারা ত্রাণ নিচ্ছেন তারা মানছেন না সামাজিক দূরত্ব কথাটি। কিন্তু যারা ত্রান দিচ্ছেন ছবি তুলতে গিয়ে তারাও গাদাগাদি করে দাঁড়ান৷ সব মিলিয়ে ত্রাণই এখন যেন নতুন এক বিপদের নাম৷
অনেক সংগঠন মাইক্রোবাসে প্যাকেট করে খাবার নিয়ে আসেন৷ তখন সেই খাবার নিতে জড়ো হন ওই এলাকার গরীব মানুষগুলো ৷ সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, তারা রীতিমত ধাক্কাধাক্কি ও কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন ৷ এক পর্যায়ে পুলিশও তাদের সামলাতে ব্যর্থ হন। কেউ কেউ পিকআপ ভ্যানে করে চাল-ডালসহ ত্রাণসমগ্রী নিয়ে আসেন ভাসমান মনুষকে দেয়ার জন্য৷ কিন্তু এ ভ্যান থেকে তাদের আর বিতরণ করতে হয় না।
ভাসমান গরীব মানুষহুলো নিজেরাই কাড়াকাড়ি করে ত্রাণের প্যাকেটগুলো নিয়ে যায়৷ এমতাবস্থায় ত্রাণ বিতরণকারীদের অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এরকম দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে৷ অনেকে নিজ বাড়িতে বসে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা মানছেন না৷ এতে বাড়ির সামনে অনেক মানুষের ভীড় জমে যায়৷ পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ভূমিকা নিতে পরছেন না৷
কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন রীতিমত ব্যানার টানিয়ে ফটোসেশন করে ত্রাণ বিতরণ করছেন। ভোলাসহ এর বাইরেও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একইভাবে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফটোসেশন করে ত্রাণ বিতরণ করছেন৷কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বের হন৷
অভাবী মানুষের জটলা দেখলেই সেখানে নেমে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেণ। আর এই কারণেই এখন বিভিন্ন রাস্তার পাশে একসঙ্গে বসে থাকেন ত্রাণপ্রার্থীরা৷
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, যেভাবে গাদাগাদি করে, করোনার স্বাস্থ্য বিধি না মেনে ত্রান বিতরণ হচ্ছে, তাতে করোনা আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে৷ ফটোসেশন আর প্রচারের লোভে কী ভয়ঙ্কর ক্ষতি যে তারা করছেন তা হয়তো নিজেরা বুঝতে পারছেন না৷
তাই ‘‘সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ে ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো হয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধি মেনে তালিকা করে ত্রাণ বাসায় পৌঁছে দেওয়া৷ তবে বস্তি বা ভাসমান মানুষের জন্য নিরাপদ কোনো জাগায় তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে৷ যেখানে প্রয়োজন, পুলিশের সহায়তা নিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে৷
মনে রাখতে হবে এটা করোনার সময়৷ আমরা যেন সেবা করতে গিয়ে ক্ষতি না করে ফেলি এবং নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হই।