করোনা আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় ভোলার নিম্ন আয়ের সাধারন মানুষ

 

তাইফুর সরোয়ারঃ
মানিক মিয়া। ভোলা বাংলা স্কুলের মোড়ে ভ্যান গাড়িতে চটপটি ও ফুসকা বিক্রি করেন। সারা দিন চটপটি ও ফুসকা তৈরির উপকরণ সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে বিকাল চারটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তা বানিয়ে বিক্রি করে ভালোই আয় হচ্ছিল তার। কিন্তু করনা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে তার আয়ও আর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। আগে যেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা বিক্রি হত, করনা আতঙ্কে এখন ক্রেতা কম। রাত আটটার পরে আর রাস্তায় মানুষ থাকে না। তাই বিক্রি ও কম। আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে তিনি আছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

আবুল কাশেম। বোরাক চালক। ভোলা নতুন বাজার – ইলিশা ফেরিঘাট সড়কে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বোরাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। কিন্তু করনা ভাইরাসের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ও রাস্তায় লোক কম থাকায় যাত্রীও কম। বোরাকের দৈনিক ভাড়া বাবদ ৪০০ টাকা জমা দেয়ার পর যৎ সামান্য নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। রাস্তায় যাত্রী কম থাকায় মাঝে মাঝে জমার টাকা তুলতেই তাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। আগামী দিনগুলো নিয়েও আছে তার মনে চরম উৎকন্ঠা।

মোঃ আলী। দিন মজুর। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন হাজী শামসুদ্দিন মিয়া মার্কের্টের সামনে হাজির হন। এখান থেকে কোন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে দৈনিক ভিত্তিতে ঐ দিনের জন্য নিযুক্ত হন। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পর দিন শেষে যে কয় টাকা মজুরি পান তা দিয়ে মোটামুটি ভাবেই চলছিল তার সংসার। কিন্তু করনা আতঙ্কে কাজ ও লোকের চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক দিন তিনি কোন কাজ জুটাতে পারেন নি। তাই পরিবার নিয়ে আনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মোঃ আলী।

করনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানিক মিয়া, আবুল কাশেম, মোঃ আলীর মত এরকম হাজার হাজার ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিক্সা ও বোরাক চালক, দিন মজুর, জেলেসহ নিম্ন আয়ের লোক দিন যাপন করছে চরম দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠায়। এদের অনেকের দৈনিক আয় অর্ধেকেরও নিচে আবার অনেকের আয় প্রায় শূণের কোঠায় নেমে এসেছে। এক দিকে আয় কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বৃদ্ধিতে এরা প্রতিটি দিন অতিক্রম করছেন এক অজানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে।

করনা আতঙ্কে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও কিছুটা ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের আয় কমে গেছে। মধ্য বিত্ত ও উচ্চ বিত্তরা এই আপদ কালীন সময়ে তাদের জমাকৃত টাকা থেকে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এই দুর্যোগ কালীন মুহূর্তে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের জন্য সরকারের বিশেষ রেশনের ব্যবস্থা করা ও সমাজের বিত্তবান মানুষরা শুধু নিজেদের জন্য খাদ্য মজুদ না করে এই সকল খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে এ সকল লোকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।

SHARE