ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে টানা পাঁচ দিন শিক্ষার্থীদের সড়ক আটকে রাখার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস বন্ধ রেখেছে মালিক ও শ্রমিক।
আর এই বাস না চালানোর কোনো ঘোষণাও দেয়া হয়নি। ফলে বিভিন্ন আন্তঃজেলা টার্মিনালে গিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। সেই সঙ্গে গত পাঁচ দিনে রাজধানীতে অচলাবস্থার মধ্যে আটকে যাওয়া কাজ সারতে যারা বের হয়েছেন, তারাও আছেন দুর্ভোগে। রাস্তায় নেমে বাস না পেয়ে বেশি টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হিসাবে গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভে ৩১৭ টি বাস ভাঙচুর এবং আটটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ছাত্ররা।
শুক্রবার রাস্তায় ছাত্রদের অবস্থান সেভাবে না থাকলেও নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকার আন্তঃজেলা টার্মিনালগুলো থেকে বাস ছাড়ছে না। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার পথে আসা বাসও।
বাস মালিকরা বলছেন, সড়কে গাড়ি ভাঙচুরের কারণে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, মালিকরা বাস নামাতে নিষেধ করেছেন।
ঢাকার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে আজ সকালে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। আবার কোনো বাস এসব টার্মিনালে আসেনি। এতে ঢাকা থেকে প্রায় সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক সমিতি সমিতি। সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, নিরাপত্তার কারণে দিনের বেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে। একই চিত্র ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে। এই রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘নিরাপত্তা না থাকায় অঘোষিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ আছে।’
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে রাতে বাস চলবে।’
গত রবিবার বাসচাপায় কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জের ধরে টানা চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের ফলে কার্যত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়ে আসছিল। রবিবার দুর্ঘটনার পরও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। পরের চারদিন দাবিতে অনড় থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা এবং বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। পরে তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। পরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমন ঘোষণার পরও গতকাল ঢাকায় বিক্ষোভ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের ফলে রাজধানী কার্যত অনেকটা অচল হয়ে যায়।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৩আগস্ট-২০১৮ই)