।। তাইফুর সরোয়ার ।।
আজ, ২২ অক্টোবর, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জননেতা তোফায়েল আহমেদের ৭৮তম জন্মদিন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর দ্বীপ জেলা ভোলার কোড়ালিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আজহার আলী ও মায়ের নাম ফাতেমা খানম।
তোফায়েল আহমেদ কলেজ জীবনেই সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং ছাত্র সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ছিলেন। ওই সময় তিনি ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচিকে ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। এই গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৩৩ মাস কারাগারে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা মামলা’য় আটক সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভার সভাপতি হিসেবে ১০ লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতিতে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে আসেন তোফায়েল আহমেদ। সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠক এবং ‘মুজিব বাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ ও ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদ স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালের মর্মন্তুদ ঘটনার পর করেছেন কারাবরণ। সাংগঠনিক সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ দলীয় বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। নিজ জেলা ভোলা থেকে আটবার নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায়ও।
তোফায়েল আহমেদ নিজেই একটি ইতিহাস। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের মানচিত্র থাকবে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তোফায়েল আহমেদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে এই জীবন্ত কিংবদন্তিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।