শহিদুল ইসলাম মনপুরা প্রতিনিধি।
জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় জন্ত্রপাতির অভাবে ভোলার মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ১০১টি পদের মধ্যে ৬৭টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মাত্র চার জন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকম চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ২০১৪ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে তিন তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। উদ্বোধনের ৯ বছর পার হলেও এখনো ৫০ শয্যার আর্থিক অনুমোদন পায়নি। ফলে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুতের অভাবে চালু হয়নি নবনির্মিত ভবনটি। চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মনপুরার দেড় লাখ মানুষ।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে ছয়টি পদই শূন্য। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, অ্যানেসথেসিয়া, ডেন্টাল সার্জন পদ দীর্ঘ দিন শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সহকারী নার্সের ২৫টি পদের মধ্যে ২১টিই শূন্য। সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারের পাঁচটি পদ থাকলেও বর্তমানে নিযুক্ত আছেন এক জন। নেই মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক, জুনিয়র মেকানিক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী নার্স, হারবাল সহকারী গার্ডিনার, সিকিউরিটি গার্ড। মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট (ডেন্টাল), এমটি রেডিওগ্রাফার, ফার্মাসিস্ট, মিডওয়াইফ, স্বাস্থ্য সহকারী, মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট (রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমাজিং), মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট (এস এল), মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট (বিসিজি), পরিসংখ্যানবিদ, স্টোরকিপার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি করে পদ শূন্য। স্বাস্থ্য সহকারীর ১০টি পদের তিনটিই শূন্য। আয়া আছেন মাত্র এক জন।স্থানীয়রা জানায়, বিচ্ছিন্ন এই উপজেলায় প্রধান সমস্যা গর্ভবতী মায়ের। এই উপজেলায় গাইনি কোনো ডাক্তার না থাকায় ঝুঁকিতে থাকেন গর্ভবতী মায়েরা। হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে অন্য উপজেলায় বা জেলায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুতগামী একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স দাবি করছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।সরেজমিনে দেখা যায়, ৩১ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪৭ । ফলে শয্যার অভাবে বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। অনেকে আবার শয্যা না পেয়ে রোগীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।এ বিষয়ে প্রেসক্লাব সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাবে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ৩১ শয্যা হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়নি। ফলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কবির সোহেল বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। হাসপাতালটিতে জনবল ও প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে সত্যি, তবে প্রধান সমস্যা বিদ্যুৎ। দিনের বেলায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি জনবল সংকট সমাধান করতে পারলেই ভালো চিকিৎসা দেওয়া যাবে।’ তিনি জানান হাসপাতালটি প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও, আর্থিক অনুমোদন পায়নি।তাই হাসপাতালটির নতুন ভবনটি চালু করা যাচ্ছে না।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান