আ.লীগের কৌশল চূড়ান্ত করছে

অনলাইন ডেস্ক:

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কৌশল চূড়ান্ত করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সরকার, দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার ও নির্বাচনী প্রচারণা এসব ইস্যু সামনে রেখে আজ দলের শীর্ষ নেতারা সংসদীয় দলের সঙ্গে যৌথসভায় বসছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের আকার কেমন হবে তা নিয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সংসদ সদস্যরা বৈঠকে মতামত দেবেন। আলোচনার মাধ্যমে বৈঠক থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলে দুই ধরনের আলোচনা আছে। একটি হলো- বর্তমান মন্ত্রিসভা বহাল রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। যুক্তি হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থা চালু আছে বলে দলের পক্ষ থেকে সামনে আনা হচ্ছে।পক্ষ থেকে সামনে আনা হচ্ছে।

নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভা ছোট করার বিষয়েও আলোচনা আছে। তবে এ বিষয়টি একান্তই দলীয় সভানেত্রী
ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। ছোট করলে কারা থাকবেন আর কারা বাদ পড়বেন তা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।

আজকের বৈঠকের পর নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন, আকার ও কবে গঠন হবে তা স্পষ্ট হতে পারে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে শুক্রবারের পরই বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে নির্বাচনের সময় কম থাকায় দলীয় সভানেত্রী আজকের বৈঠক থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি স্পষ্ট বার্তা দেবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশনার পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাতে কেউ প্রার্থী হতে চেষ্টা না করেন সেজন্য কড়া বার্তা দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ এগিয়ে এনেছে এ সংক্রান্ত কমিটি। ইশতেহারের বিষয়েও দলীয় ফোরামে আলোচনা হতে পারে।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে এই যৌথসভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখল রাখার কৌশল, নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করা, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারা জানান, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে আজকের বৈঠকে।

এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকটি দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচন কেন্দ্রিক সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এই বৈঠকে। তিনি বলেন, বৈঠক থেকে দলের সবাই বিশেষ বার্তা নিয়ে যাবেন। সে বার্তাটা হলো নির্বাচনে আমাদের কীভাবে কাজ করতে হবে, সরকারের উন্নয়ন কীভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক মাঠে ড. কামালের নেতৃত্ব বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল মিলে গঠিত জাতীয় এক্যফ্রন্টের কর্মসূচির ওপর নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী জোটকে চাপে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এজন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এসব বিষয় নিয়ে দলের কৌশল কী হবে তা বৈঠকে জানানো হবে।

নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠ দখল রাখার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি দলের উন্নয়ন প্রচার শুরু করেছে দলটি। তফসিল ঘোষণার পর বিভাগীয় শহরগুলোতে নির্বাচনী সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে আজকের যৌথসভায়। নেতারা জানান, যৌথসভায় দলের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করে একটি ইশতেহার উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১০ই অক্টোবর এই উপ-কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং সদ্য ঘোষিত সরকারের ডেল্টা প্ল্যান পর্যালোচনা করে তৈরি করা হচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার। এরইমধ্যে ইশতেহারের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দলের যৌথসভায় এটি উত্থাপন করা হবে। কয়েক নেতা জানান, এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো বিষয়েও আলোচনা হবে যৌথ সভায়। এর আগে, একাধিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে। তবে গত সোমবার (২২শে অক্টোবর) সৌদি আরব সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার আকার ছোট না করার ইঙ্গিত দেন। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটি প্রার্থী মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। গত ১০ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলটির নির্বাচন পরিচালনা জাতীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। যৌথ সভায় এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সার্বিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও কথা বলবেন। এতে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর প্রতি বিশেষ বার্তা থাকবে।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৬অক্টোবর-২০১৮ইং)

SHARE