অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
‘আরে রাখেন, ভাগ্য ভালো যে উনাকে গুম করেনি’ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের রিমান্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের শুনানির সময় তার আইনজীবীকে এ কথা বলেছেন একজন বিচারপতি।
রবিবার বিকালে আটকের পর সোমবার শহিদুলকে সাত দিনের রিমান্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত। আর তারপরদিন এই রিমান্ড ঠেকাতে উচ্চ আদালতে যান তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চে এই রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয় এবং শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
শহিদুলের আইনজীবী কামাল হোসেন পরে বলেন, ‘যেহেতু আদালত দ্রুত উনাকে হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা আশা করি, সেই পর্যন্ত তার রিমান্ড স্থগিত থাকবে।’
তবে রিমান্ড বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে বলে আদালতের আদেশে জানানো হয়।
শহিদুলের পক্ষে পক্ষে আদালতে শুনানি করেন কামাল হোসেন ও সারা হোসেন। এছাড়া আইনজীবী শাহদীন মালিক, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও তানিম হোসেইন শাওন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
সারাহ হোসেন শুনানিতে শহিদুলের রিমান্ড স্থগিতের জন্য যুক্তি দেখানোর সময় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন বলেন, ‘আরে রাখেন, ভাগ্য ভালো যে উনাকে গুম করেনি।’
রবিবার রাতে শহিদুলকে তার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয় অভিযোগ করে আসছিল পরিবার। সোমবার সকালে তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ সাংবাদ সম্মেলন করে তার মুক্তিরও দাবি করেন।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম এবং গণসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শহিদুল আলমকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
সেদিন রমনা থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় শহীদুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বিকালে ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাটি করেন।
দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পেছনে সরকারের ‘দুর্নীতি’, ‘অপশাসন’ দায়ী বলে অভিযোগ করেন।
শহিদুল বর্তমান সরকারে ‘অনির্বাচিত’ দাবি করে এমনও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা জিতবে না। এ জন্যই সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শক্তি প্রয়োগ করছে।
পরে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা এ মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয় এই আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে।
বিচারিক আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে শহিদুল অভিযোগ করেন, আটকের পর তাকে মারধর করা হয়। তিনি বলেন, ‘তর্কাতর্কির একপর্যায়ে একজন আমার মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। রক্তে আমার পাঞ্জাবি ভিজে যায়। এরপর পঞ্জাবি খুলে ধুয়ে ভিজে পাঞ্জাবি আমাকে পরতে দেয়। রাতে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় আমাকে একটি চাটাইয়ের উপর রাখা হয়।’
‘কিছু সময় পর আমাকে একটি জায়গায় নামায়। সেখানে আমাকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করায়। এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে আমাকে তারা মোসাদ (ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা) ও আইএস এর এজেন্ট বলে গালিগালাজ করে।’
(আল-এম, ৭আগস্ট-২০১৮ই)