আমলারা সতর্ক পর্যবেক্ষণে।।

 

জাতীয়  |
ভোলা নিউজ ডেস্ক।। কেমন হবে নির্বাচনকালীন সরকার, এ নিয়ে আমলাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে চলছে নানা আলোচনা। মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট হবে নাকি একই রকম থাকবে, এ নিয়েও অনেকের মধ্যে জানার আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সে কারণে প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা সতর্ক পর্যবেক্ষণে আছেন। সচিবালয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ নানা আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতির বিষয়টি। সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে কর্মরত এক যুগ্মসচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা আমরা খবরে দেখি, বিদেশ থেকে অনেকে আসছেন; কী হতে যাচ্ছে তা জানার একটা আগ্রহ আমাদেরও থাকে। নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে জানতে চান ওই কর্মকর্তা। ১৩ বিসিএস ব্যাচের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে নির্বাচন-রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানো ঠিক নয়। তবে আমি চাকরিজীবী আবার দেশের নাগরিকও। আমাদের সন্তান, স্বজনরা অনেকেই জানতে চায় নির্বাচন নিয়ে কী হচ্ছে, হবে কি না, পেছাবে কি না মানে আগের নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ঝামেলা হওয়ায় কেউ কেউ দুশ্চিন্তা থেকে এসব জানতে চায়। ৪ নম্বর ভবনের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, নানামুখী আলোচনা হচ্ছে এ নির্বাচন নিয়ে। কেউ বলে মন্ত্রিসভা ছোট হবে, কেউ বলে হবে না। গত কয়েকদিনে সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তাদের আগ্রহের বিষয়টি জানা যায়। অনেকেই নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন নিয়ে নানা বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখান। উপসচিব পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের ভোট একটি উৎসব। ২০১৪ সালে ভোটের কারণে বিষাদের পরিস্থিতি হয়েছিল। নির্বাচনের কারণে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা হোক তা প্রত্যাশা করি না। রাজনৈতিক বিষয় হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও ব্যাচের অনেকে তো বিষয়টি খোঁজ রাখছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব বলেন, বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক-প্রভাষক এখন ভোটের বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চান। অনেকে ধারণা করেন সচিবালয়ে সব ধরনের আপডেট খবর আছে। তবে নাগরিক হিসেবে আমারও নির্বাচনের মতো ইস্যু নিয়ে জানার আগ্রহ তো থাকেই। সরকার দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলেও ওই সরকার রুটিনমাফিক দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনে সার্বিক সহায়তা করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতার বিষয়ে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ সরকার আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর। সরকার সারা বিশ্বকে দেখাতে চায় যে উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশও তেমন নির্বাচন করতে পারে। তবে সেটি সংবিধানের বাইরে গিয়ে নয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরাও। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হবে কি না- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার নামে কিছু উল্লেখ নেই। একটি নির্বাচিত সরকার তার পরবর্তী সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থাটা বলা হতো যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল সে সময়। যেহেতু সেই পদ্ধতি সংবিধানে নেই ফলে নির্বাচনকালীন সরকার নামে কিছু নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন যে, নির্বাচনকালীন সরকারের পরিসর কমাবেন বা বাড়াবেন, এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।আমাদের সংবিধানে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের বিধান রয়েছে। এর একটি হচ্ছে চলমান সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে এবং অন্যটি মেয়াদপূর্তির আগেই সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে- (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে, এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ সংবিধানের এ বিধানমতে, বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

 

ভোলা নিউজ /টিপু সুলতান

SHARE