নুরউদ্দিন আল মাসুদ
আজ থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত। হোটেল, কটেজ, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ পর্যটক বরণে প্রস্তুত। খুলে দেওয়া হয়েছে বিনোদনকেন্দ্রগুলোও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসবেন লাখো মানুষ। সমুদ্রসৈকতের লোনাজলে শরীর ভিজিয়ে লোকজন বালুচরে দেবেন দৌড়ঝাঁপ। ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিংবা বিচবাইকে উঠে ছুটবেন বালুচরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে কোলাহল-হইচই। মানুষ ও ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে বা বিচবাইকের চাকায় চাপা পড়ে বিলীন হবে কাঁকড়াগুলো।
বালুচরে খানিক্ষণ দাঁড়ালে বোঝা যায় কাঁকড়ার রহস্যময় জীবন। সেটা কী রকম? সৈকতের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত যত দূর চোখ যায়, দৃষ্টিসীমায় দেখতে পাবেন নানা নকশার আলপনায় আঁকা বিশাল বালুচর। ভেজা বালু দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে কাঁকড়ার দল সাজিয়েছে সেই আলপনা। আলপনার ভেতরে-বাইরে গর্ত খুঁড়ে তৈরি করেছে কতশত বাসা। প্রজনন ও নিজেদের লুকিয়ে রাখার জন্য কাঁকড়া গর্ত খনন করে। গর্ত বা বাসার গভীরতা সর্বোচ্চ এক ফুট। জোয়ারের পানিতে অসংখ্য বাসা বিলীন হয়, ভেঙেও যায়। তাতে সমস্যা হয় না কাঁকড়ার। কারণ সামনে যার গর্ত পড়বে, বাসাও তার হয়ে যায়। কার বাসায় কে ঢুকে পড়ছে, হিসাব নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ১৮ মার্চ সৈকতে পর্যটকের সমাগম নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। করোনাকালের দীর্ঘ পাঁচ মাসে সৈকতের রূপ পাল্টেছে। গভীর সাগর থেকে দল বেঁধে ডলফিন চলে এসেছে কাছাকাছি এলাকায়। ডলফিনের ডুব–সাঁতারে মুগ্ধ হয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ডিম পাড়তে আসছে মা কচ্ছপ। বিশাল বালুচরে লাল কাঁকড়ার বিস্তার ঘটেছে অনেক।
শেখ মো. নাজমুল হুদা আরও বলেন, আজ থেকে সৈকত খুলে যাচ্ছে। আগের মতো লোকসমাগম বেড়ে গেলে সৈকতের নির্মল এই পরিবেশ ধরে রাখা কঠিন হবে। তখন লাল কাঁকড়াও শেষ হয়ে যাবে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে ৩০ বছর আগেও লাল কাঁকড়ার বিচরণ ছিল। মানুষের কোলাহল, মানুষের পায়ের নিচে পড়ে, বিচবাইক-ঘোড়ার পায়ের চাপায় বিলুপ্ত হয় কাঁকড়ার রাজ্য। তবে করোনাকালের টানা পাঁচ মাস সৈকতের এই পাঁচ কিলোমিটারে লোকসমাগম বন্ধ থাকায় লাল কাঁকড়াসহ নানা প্রাণীর বিচরণ আবার শুরু হয়। কিন্তু তা এখন আর ধরে রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে সৈকতে হাজার হাজার মানুষের কোলাহল বাড়বে। এক হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার এতটুকু সৈকতে যদি এক লাখ মানুষের রাত–দিন দৌড়ঝাঁপ চলে, তাহলে কাঁকড়ার প্রাণ বাঁচে কী করে? এভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভব নয়।