ডেস্ক: অনলাইন-ভোলানিউজ.কম,
বাংলাদেশের উৎক্ষেপিত প্রথম স্যাটেলাইন বঙ্গবন্ধু-১ এর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএনপি নেতাদেরকে ‘অর্বাচীন’, ‘অজ্ঞ’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্ন রেখেছেন, দেশবাসী যখন এ বিষয়ে উদ্বেলিত, তখন বিএনপির মনে দুঃখ কেন।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট। এরই মধ্যে এটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে গেছে।
সরকার এই উৎক্ষেপণকে বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে। তবে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সংশয়পূর্ণ। উৎক্ষেপণের পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, এর মালিকানা বাংলাদেশের নেই। এর মালিকানা দুই ব্যক্তির কাছে চলে গেছে।
সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বিএনপি নেতার এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইটের মালিকানা অবশ্যই বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশ সরকারই এর মালিক। …যারাই ভাড়া নেবে, যেটুকু সে ভাড়া নেবে, সেটুকুর সে মালিক হবে তারা। দুটি ব্যক্তি তো এটার মালিক হতে পারে না। এই ধরনের মন্তব্য করাটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
স্যাটেলাইটটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে এবং বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য ২০টি যথেষ্ট বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, বাকিগুলো সার্কভুক্ত দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানে ভাড়া দেয়া যাবে।
‘দুই ব্যক্তি এটার মালিক কীভাবে হলো, এটা আমি বলতে পারব না। এ ধরনের কথা তারা কেন বললেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো মানুষের যদি দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে, মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকে, কেউ যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত হতে, মাথা উঁচু করে চলবে এই ধরনের চিন্তা চেতনা যদি কারও থাকে, তাহলে কেউ ওই ধরনের মন্তব্য করতে পারবে না।’
এই উৎক্ষেপণে দেশে বিদেশে সব জায়গায় মানুষ খুশিতে উদ্বেলিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন সব মানুষের এত খুশি, বিএনপির কেন দুঃখ?’
এই স্যাটেলাইট থেকে যেসব সেবা পাওয়া যাবে তার একটি ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টেলিভিশন টু হোম)। এই সেবা দুই জন দেবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘জানি না, সেটাকে মিন করেছেন, সেটাকে গুলিয়ে ফেলেছেন কি না। কিন্তু দুই ব্যক্তিকে পুরো স্যাটেলাইট দিয়ে দেয়া হয়েছে, এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
‘এভাবে অর্বাচীনের মতো, অজ্ঞর মতো কথা বলা, তাদের পক্ষেই সম্ভব। এ থেকেই জাতি বুঝতে পারে তারা আসলে দেশকে ভালোবাসে না…’
‘না, একেবারে অর্বাচীন, অজ্ঞ, টেকনোলজি সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, এখান থেকেই বুঝা যায়। এরা দেশ চালিয়েছে, তাহলে দেশের উন্নতি হবে কীভাবে? এরা ক্ষমতায় আসলে দেশ উন্নত হবে না।’
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় সাবমেরিন কেবলে বিনামূল্যে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘তাদের চিন্তা ভাবনা এত সংকীর্ণ, যখন এই অঞ্চলে সাবমেরিন কেবল এসেছে, ভারত নিয়েছে, মিয়ানমার নিয়েছে, থাইল্যান্ড নিয়েছে, সব দেশগুলো নিয়েছে এবং এরা প্রত্যেকে কিন্তু তখন বিনা পয়সায় নিয়েছিল। বাংলাদেশকেও বলেছিল, বিনা পয়সায় বাংলাদেশকে সাবমেরিন কেবল সংযোগ করে দেবে, শুধু বছরে ছয় হাজার ডলার ভাড়া দিতে হবে।’
‘সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। মানা করে দিল, আমি এটা নেব না। কেন? সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযোগ হলে সব তথ্য নাকি পাচার হয়ে যাবে।’
‘আমি জানি না, বিএনপির কাছে কী এমন গোপন তথ্য থাকে, যা তারা সব সময় কুক্ষিগত করে রাখতে চায়, ধরে রাখতে চায়।’
‘এই কথা বলে তখন আমাদেরকে বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এসে ৯৬ সালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আমাদের দেশের মানুষের জন্য নতুন প্রযুক্তি করে দেয়ার জন্য।’
নতুন আর কী প্রযুক্তি সরকার নিয়ে আসবে, এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যেটা আধুনিক হবে, সময়োপযোগী হবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটা যেন গ্রহণ করতে পারি, ব্যবহার করতে পারি, তখন সেটার চিন্তাভাবনা করব।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান শেখ প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এভাবে ধীরে ধীরে আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে।
সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জানতে চান, মহাকাশে যেখানে বঙ্গবন্ধু-১ অবস্থান নিয়েছে, সেখান থেকে গ্রাউন্ড স্টেশনে সংকেত আসবে কি না, আর টেলিভিশনে স্পষ্ট ছবি আসবে কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগেই এই বিষয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে। মহাকাশের যে এলাকায় স্যাটেলাইট আছে, সেখান থেকে বাংলাদেশ মানসম্মত ছবি এবং অন্যান্য সেবা পাবে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৬জুন-২০১৮ইং)