ভোলা প্রতিনিধি: সাগরে নিম্নচাপ ও দুদিন ধরে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ভোলার মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচটি জেলে ট্রলার বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৫টি ট্রলারের ৪৯ জন মাঝিমাল্লা জীবিত উদ্ধার হয়েছে। তবে স্বজনরা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া অনেকে ফেরত আসেনি। জেলা শহরসহ সাত- উপজেলায় গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপাকে রয়েছেন দ্বীপের মানুষ।
১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই ৫টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার।
পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে ৪টি ট্রলারডুবছে নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন খরচির চর এলাকার বঙ্গোপসাগর মোহনায়। অপরটি ডুবছে ঢালচর এলাকার বঙ্গোপসাগর মোহনায়। পাঁচটি ট্রলারে মোট ৪৯ জন মাঝিমাল্লা ছিল। তাদের সবাই জীবিত উদ্ধার হয়েছে। পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে ৪টি ট্রলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের উৎপল মাঝি, স্বপন মাঝি, বাকের মাঝি ও আব্দুল হান্নান দফতরির৷ অপরটি ঢালচর ইউনিয়নের মোঃ আকতার মাঝির। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে উৎপল মাঝির ট্রলারে ছিলেন ৭ জন মাঝিমাল্লা, স্বপন মাঝির ট্রলারে ছিলেন ৮ জন, বাকের মাঝির ট্রলারে ছিলেন ১০ জন, আব্দুল হান্নান মাঝির ট্রলারে ছিলেন ১৪ জন এবং আকতার মাঝির ট্রলারে ছিলেন ১০ জন মাঝিমাল্লা।
খরচির চর এলাকায় ডুবে যাওয়া ৪টি ট্রলারের মাঝিমাল্লারা মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। অন্যদিকে ঢালচর এলাকায় ডুবে যাওয়া আকতার মাঝির ট্রলারের সকল জেলের বাড়ি ঢালচর ও চর মানিকা এলাকায়।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি আকতার, উৎপল, বাকের ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, শুক্রবার দুপুর থেকে হঠাৎ করে বঙ্গোপসাগর মোহনায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। এসময় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝিরা সাগর থেকে নিরাপদ জায়গায় আসতে শুরু করেন। বিকেল ৪ টার দিকে প্রবল ঢেউয়ের চাপে আকতার মাঝির ট্রলারটি ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে ডুবে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অপর একটি ট্রলার ৩ জেলেকে উদ্ধার করে। ঘটনার ৩ ঘন্টা পর অন্য দুটি ট্রলার নিখোঁজ ৭ জেলেকে উদ্ধার করে ঢালচর এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন খরচির চর এলাকার একই জায়গায় উৎপল মাঝি, স্বপন মাঝি, বাকের মাঝি ও আব্দুল হান্নান মাঝির ট্রলারসহ ৪ টি ট্রলার ডুবে যায়। এসময় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝিমাল্লা’রা সাগরে থাকা বয়া ধরে ভেসে থাকে। ঘন্টাখানেক পর অপর দুটি ট্রলার তাদেরকে উদ্ধার করে।
ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরার ৫টি জেলে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় নিখোঁজ কেউ নেই। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে সরকারি সহায়তায় দেবো।
তবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পুরো ভোলা জেলা জুড়ে চরম বৈরী অফ বিরাজ করায় অনেক ছেলেদের এখনো কোনো খোঁজ মিলেনি। মৎস্য বিভাগ বলছেন সকল জেলারাই গতকাল লোগো চপ চলাকালীন সময়ে পোতাশ্রয় ফিরে এসেছেন। কিন্তু ছেলেদের স্বজনরা বলছেন এখনো সাগরে অনেকগুলো মাছ ডলা ডলার রয়েছে যারা এখনো ফিরে আসেননি। অপরদিকে গত দুদিন ধরে প্রবল বর্ষণ এবং বাতাসে ভোলার জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ সবজি সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ২ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকাই বিপাকে পড়েছে পুরো জেলার মানুষ। সাগর এবং মেঘনা মোহনা চরম উত্তাল থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে ভোলার সাথে অভ্যন্তরীণ লঞ্চ যোগাযোগ।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান