অনলাইন ডেস্ক,ভোলানিউজ.কম,
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে ‘বিতর্ক’ তৈরি করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিজেই গর্তে পড়েছেন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক রহমানের নাগরিকত্বের ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘প্রলাপ বকা’ ও ‘অপপ্রচার’ বন্ধ করতেও পরামর্শ দেন ফখরুল।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় ১০ বছরেও তিনি দেশে ফেরেননি।
এর মধ্যে দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি নেতার ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২২ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। যদিও গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন।
চলতি বছরই ২১ গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাবনার মধ্যে তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে ২১ এপ্রিল শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য থাকা অবস্থায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট বর্জন করেছেন।
দুই দিন পর বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের জমা দেয়া পাসপোর্ট প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। আর দেশে ফিরে একই দিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তারেক রহমানের জমা দেয়া পাসপোর্টের নথি প্রদর্শন করেন।
শাহরিয়ার আলম জানান, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি নেতার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আর তা নবায়নের আবেদন করেননি। ২০১৪ সালের ২ জুন তা যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সে পাসপোর্ট তিনি জমা দিয়েছেন। আর সে পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকার লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে।
পাসপোর্ট হস্তান্তর করার অর্থই নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া কি না, একজন গণমাধ্যমকর্মীর এমন প্রশ্নে সেদিন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এটাই মনে করব। বিদেশে আপনার পরিচয়- আপনার পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টটিই যখন আপনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তার অর্থ আপনি নাগরিকত্ব ক্লেইম করছেন না… আপনার কাছে একটাই পরিচয়পত্র ছিল, আপনি তা হস্তান্তর করে দিয়েছেন, এটা কী বোঝায়?’।
এতদিন স্বীকার না করলেও পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব জানান, তারেক রহমান তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। জানান, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের জন্য এই কাজ করতে হয়েছে এবং তাদের নেতা এখন সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়েই আছেন।
এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ক্লেইমের মূল বিষয় নাগরিকত্ব ছিল না, ছিল পাসপোর্ট ফেরত দেয়া। কিন্তু বিএনপির নেতার কথাতেই এখন প্রমাণ হচ্ছে যে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তাই নাগরিকত্বের কথাটি আমি এখন আরো জোরালোভাবে দাবি করব।’
ফখরুল বুধবারের মানববন্ধনে বলেন, ‘তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজেই গর্তে পড়েছেন। নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন।’
খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে সামনে যে আন্দোলন হবে তা মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব না। সে জন্যই ভয়ে, আতঙ্কে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দী করেছে সরকার।’
‘দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকসহ, মহিলা দল, কৃষকদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। সেদিন থেকে তিনি ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিলেও তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের ওপর শুনানি হবে আগামী ৮ মে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ,২৫এপ্রিল-২০১৮ইং)